মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসাবে ফিরে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইস্পাতের উপর ২৫% এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপর প্রায় ১০% হারে আমদানি শুল্ক চাপানোর হুমকি দিয়েছেন, যা তাঁর রক্ষণশীল অর্থনৈতিক নীতির প্রতিফলন। ট্রাম্পের ইস্পাতের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ভারতের ইস্পাত উৎপাদকরা চিন্তিত।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারানোর ভয় এবং দেশীয় বাজারে ক্রমবর্ধমান ইস্পাত আমদানির কারণে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতের ইস্পাত উৎপাদনকারীরা। ভারতীয় ইস্পাত রপ্তানিকারকদের আশা এখন ১২-১৩ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ট্রাম্প ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের উপর নির্ভরশীল।
মোদী প্রায়ই তাঁদের মিত্রতার উদাহরণ দেন। এই মিত্রতা ব্যবহার করে, বিশেষ করে উভয়ের প্রতিপক্ষ চীনের বিরুদ্ধে ভারতের চলমান সামরিক প্রস্তুতিকে কাজে লাগিয়ে, মোদী কি ভারতীয় ব্যবসাগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারবেন? এই প্রশ্নের উত্তর এখন ব্যবসা মহল থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদরাও খুঁজছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাতের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির খবর প্রকাশ হওয়ার পরেই ভারতের প্রধান ইস্পাত প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো, যেমন ভারতের ইস্পাত প্রাধিকরণ (সেল), টাটা লৌহ ও ইস্পাত কোম্পানি (টিস্কো), জেএসডব্লিউ প্রভৃতি শেয়ার বাজারে ধাক্কা খায়। বিএসই-তে নথিভুক্ত সেল-এর শেয়ার দর ৪.৬৭%, টিস্কোর ৩.১১% এবং জেএসডব্লিউ-এর ২.২% হ্রাস পায়। এই প্রবণতা শুধু ভারতের বাজারে নয়, বরং গোটা এশিয়ার বাজারেই লক্ষ্য করা গেছে।
গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো চীন থেকে ইস্পাত আমদানি ভারতের ইস্পাত প্রস্তুতকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত চীন থেকে ভারতে ইস্পাত আমদানি ৮০% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়কালে রেকর্ড ১৬.১ লক্ষ মেট্রিক টন মান বেy আমদানি করা হয়েছে চীন থেকে।
এবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের দরজা চীনের জন্য বন্ধ হলে, চীন থেকে ভারতে আমদানি বাড়বে সস্তা ইস্পাতের, এবং তার ফলে দেশীয় ইস্পাত শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ভারতের ইস্পাত সমিতি (আইএসএ) আতঙ্ক প্রকাশ করেছে।
ট্রাম্প তাঁর প্রথম শাসনকালে ইস্পাত আমদানি শুল্ক ২৫% এবং কিছু অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের উপর ১০% হারে কর চাপান। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপানো আমদানি করের কারণে এবং ভারতকে অগ্রাধিকার দেওয়া উন্নয়নশীল দেশের তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে দ্বিতীয় মোদী সরকার ২৮টি মার্কিন পণ্যে শুল্কের হার বাড়িয়ে দেয়।
তবে জো বাইডেনের শাসনকালে, বিশেষ করে ২০২৩ সালের জুন মাসে মোদীর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরেই ভারত সমস্ত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে।
বর্তমানে আবার ট্রাম্প ইতিহাসের চাকাকে একই জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। ভারত তথা এশিয়া ও বিশ্বের প্রধান ইস্পাত উৎপাদকরা পড়ন্ত শেয়ার দর নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
যদিও কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশ ট্রাম্পের ইস্পাতের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে সমালোচনা করেছে, ভারত ক্ষতির মুখোমুখি হয়েও চুপ রয়েছে।
কারণ মোদী সরকার ট্রাম্পের সমর্থনের ভিত্তিতে কাজ করতে চায় এবং ট্রাম্প সরকারকে চটানোর কোনো অভিপ্রায় মোদী সরকারের নেই।
ফলে ১২-১৩ ফেব্রুয়ারি মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফর ও ট্রাম্পের সাথে বৈঠক পর্যন্ত ভারত এই বিষয়ে উচ্চবাচ্য করতেও চাইছে না।
মোদী ও ট্রাম্পের বৈঠকের পরে ট্রাম্পের ইস্পাতের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য পরিবর্তন হয় কিনা, এখন সেটাই দেখা বাকি।