ভারতের বিভিন্ন জায়গা জুড়ে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে গত বছরের ন্যায় এই বছরেও ভারতের বিদ্যুৎ ও কৃষি ক্ষেত্রে সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তর, এই সপ্তাহের প্রথমেই উত্তর পশ্চিম, পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব ভারতে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করে জানায় যে ভারত সম্ভবত এই বছরে বসন্ত কাল এড়িয়েই সরাসরি গ্রীষ্মে প্রবেশ করতে চলেছে। আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনার সাক্ষী সবথেকে বেশী দেখতে চলেছে উত্তরাখন্ড ও হিমাচলপ্রদেশ যেখানে গত মাসেই তীব্র তুষারপাত হয়েছিল।
আবহাওয়াবিজ্ঞানের পরিভাষায় যখন সমতলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায় বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে ৪.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশী থাকে, তখন সেখানে তাপপ্রবাহ চলে। পাহাড়ের ক্ষেত্রে এই সীমা হল ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং উপকূলবর্তী এলাকায় এটি হল ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
তাপপ্রবাহের এই সংজ্ঞা প্রমাণ করে যে ভারতের অনেক জায়গাই বিগত কয়েকদিন ধরে তাপপ্রবাহের কবলে আছে। এই প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার যে আবহাওয়া দপ্তর তাপপ্রবাহ নিয়ে সাবধানবাণী মূলত এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে দিয়ে থাকে, এই বছরই তার ব্যতিক্রম হল।
এরকম অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি (স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে প্রায় দশ ডিগ্রী বেশী) এই সপ্তাহেই বিদ্যুতের চাহিদাকে তুঙ্গে তুলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এর অনুষঙ্গ হিসেবে জলসেচ ও শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের বহুল ব্যবহার বিদ্যুতের যোগানের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করতে চলেছে।
ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রক সম্প্রতি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে যে বিদ্যুতের চাহিদা এপ্রিল মাস নাগাদ সব রেকর্ড ভেঙে ২২৯ গিগাওয়াট ছুঁতে চলেছে। আমদানীকৃত কয়লা দ্বারা চালিত ভারতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকেও সতর্কবার্তা দিয়ে তাদেরকে পূর্ণক্ষমতায় কাজ করতে বলা হয়েছে। এটা পরিষ্কার যে দেশীয় কয়লার উপর চাপ ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়ানোর জন্যই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
দিল্লী, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট মূলত এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া একটি প্রতিবেদন দেখাচ্ছে যে দিল্লী ১৯৮১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ২৪.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রত্যক্ষ করলেও এই বছরে হোলি উৎসবের আগে তাকে সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে হতে পারে।
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারন
ফেব্রুয়ারি মাসে এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ হল দুর্বল পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ও তার প্রভাবে যথেষ্ট শীতকালীন বৃষ্টি না হওয়া। স্কাইমেট ওয়েদারের সহ সভাপতি মহেশ পালাওয়াতের মতে, উত্তর ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে শক্তিশালী পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জন্যই জানুয়ারিতে তীব্র তুষারপাত হয়েছিল অথচ সেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝার শক্তি হ্রাস পাওয়ার ফলেই ফেব্রুয়ারিতে দাবদাহ শুরু হয়েছে।
কৃষিক্ষেত্রে খারাপ প্রভাবের আশঙ্কা
ভারতের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও আবহাওয়া দপ্তর একযোগে গমচাষীদের সতর্ক করে বলেছে যে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে গমের পাতার মরিচা রোগের আশঙ্কা পূর্ণমাত্রায় রয়েছে। তারা বলেছে যে এখন লা নিনা ভারতের আবহাওয়ায় ভূমিকা নিলেও এপ্রিল-জুন মাস নাগাদ এল নিনোর প্রভাব আসতে চলেছে ভারতে। তবে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র জনগণকে আশ্বস্ত করে এও জানিয়েছে যে ভারতে যথেষ্ট পরিমাণে গম মজুত রয়েছে, তাই চিন্তার কোন কারণ নেই।