Close

ইসরায়েল ইস্যুতে পশ্চিমা জোটে ফাটল ?

জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪০ টিরও বেশি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে । তবে ২৭ সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের খুব কম দেশই তাদের মধ্যে রয়েছে, যা ধিরে ধিরে পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।

Image by hosny salah from Pixabay

ফ্রান্স আগেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসি-র গ্রেফতারি পরোয়ানাকে সমর্থন দিয়েছে। এবং পরবর্তীতে আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ে আগামী সপ্তাহে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে , এই পদক্ষেপের ফলে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে একটি পূর্ণ রাষ্ট্র রূপে স্বীকৃতি দেবার দবি আরও শক্তিশালী হলো।

তবে এই পদক্ষেপ ইউরোপ এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ককে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে। দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসরাইল এর প্রতিবাদে নরওয়ে এবং আয়ারল্যান্ড থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর স্পেনের সঙ্গে সম্পর্কে উত্তেজনার কারণে আগেই ইজরায়েল তার রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নিয়েছিল।

তিনটি ইউরোপীয় দেশ বলেছে যে তাদের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তটি মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি অর্জনের সর্বোত্তম উপায়। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪০ টিরও বেশি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে । তবে ২৭ সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের খুব কম দেশই তাদের মধ্যে রয়েছে, যা ধিরে ধিরে পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।

নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গহর স্টোর জোর দেন যে, নরওয়ে ২৮ মে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দেবে, যা মধ্য প্রাচ্যের শান্তি পরিকল্পনাকে আরও মজবুত করবে এবং ইজরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য দেশটির প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেবে।

নরওয়ে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের সমর্থনের জন্য পরিচিত, নরওয়েজিয়ান সরকার ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর থেকে ইজরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের উপর জোর দিয়ে এসেছে, তবে নরওয়ে এখন ও পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া থেকে বিরত ছিল।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এই সিদ্ধান্তকে ইসরায়েল-বিরোধী নয় বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন।

তিনি বলেন, “এই স্বীকৃতি ইসরায়েলের জনগণের বিরুদ্ধে নয় এবং অবশ্যই ইহুদি জনগণের বিরুদ্ধে নয়, এটি হামাসের পক্ষে ও নয়। এটা সহাবস্থানের পক্ষে।”তিনি বলেন, “এই স্বীকৃতি ইসরায়েলের জনগণের বিরুদ্ধে নয় এবং অবশ্যই ইহুদি জনগণের বিরুদ্ধে নয়, এটি হামাসের পক্ষে ও নয়। এটা সহাবস্থানের পক্ষে।”

গাজায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী শান্তি চুক্তির দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, আইরিশ প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এবিষয়ে আশাবাদ ও সংহতির অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলি দ্বারা প্যালেস্টাইন কে রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতির সিদ্ধান্তের অর্থ ‘সন্ত্রাসবাদের পুরস্কার’।  তিনি আরও বলেন, হামাস এই পুরস্কারে উৎসাহিত হয়ে ইসরাইলের ওপর ৭ অক্টোবরের হামলার পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করবে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাটজ বলেন “সন্ত্রাসী সংগঠন হামাস হলোকাস্টের পর ইহুদিদের ওপর সবচেয়ে বড় গণহত্যা চালিয়েছে, ও বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যৌন অপরাধ করেছে , এর পরে এই দেশগুলি হামাস এবং ইরানকে পুরষ্কার দিচ্ছে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে”।

 কাটজ আরও যোগ করেছেন – হামাসের নেতৃত্বে জঙ্গিরা অন্তত ১২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনেরও বেশি অপহরণ করার পর ইসরায়েল ৭ অক্টোবর গাজায় তার সামরিক অভিযান শুরু করে। ইজরায়েল তার সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় সুরক্ষার সাথে কোন সামঝোতা করবেনা।

ইউরোপ ও আমেরিকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এহেন আক্রোশ এই প্রথম দেখা গিয়েছে। যদিওবা যুক্তরাষ্ট্র এত  অভ্যন্তরীন এবং আন্তর্জাতিক চাপ ও বিরোধের পরেও  এখনও পর্যন্ত ইসরায়েলকে নিঃশর্ত সমর্থন করে চলেছে। কিন্তু পশ্চিমা জোটে এই প্রথমবার ইজরায়েল ইস্যুতে ফাটল বিশ্বের সম্মূখে উন্মুক্ত হয়ে গেছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র যিনি ভূ-রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আগ্রহী। তাঁর লেখার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলিকে ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।

Leave a comment
scroll to top