“আমি নিরাপদে বলতে পারি দুর্নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বড্ড সমস্যা নেই।” মোদী সরকার, ভারতীয় জনতা পার্টি এবং জম্মু ও কাশ্মীরে রাজনৈতিক ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে এমন একটি সাক্ষাৎকারে, অবিভক্ত জম্মু ও কাশ্মীরের শেষ রাজ্যপাল সত্য পাল মালিক বলেছেন, “ম্যায় সেফলি কেহ সাক্তা হুঁ। প্রধানমন্ত্রী কো দুর্নীতি সে বহুত নফরাত নেহি হ্যায়”
যিনি ফেব্রুয়ারী ২০১৯ এর পুলওয়ামা হামলার সময় এবং সেই বছরের আগস্টে ৩৭০ ধারা বাতিলের সময় জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল ছিলেন, মালিক, আরও বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর সম্পর্কে “অজ্ঞাত” এবং “অজ্ঞ”। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে পুলওয়ামা হামলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ত্রুটি নিয়ে কথা না বলার জন্য বলেছিলেন।
মালিক উল্লেখ করেছেন যে পুলওয়ামাতে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের কনভয়ে হামলা আসলে ভারতীয় সিস্টেম এবং বিশেষ করে সিআরপিএফ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের “অযোগ্যতা” এবং “গা ছাড়া মনোভাব” এর ফলাফল। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন রাজনাথ সিং। সিআরপিএফ তার জওয়ানদের পরিবহনের জন্য বিমান চেয়েছিল কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। যাতায়াতের রুটটির স্যানিটাইজেশনও কার্যকরভাবে করা হয়নি।
পুলওয়ামা হামলার সময় মোদী করবেট পার্কে শুটিং করছিলেন, সেখান থেকে সত্য পাল কে ফোনে যোগাযোগ করলে সত্য পাল সমস্ত ত্রুটি সম্পর্কে অবগত করেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তাঁকে কোনভাবে মুখ খুলতে নিষেধ করেন। NSA -র অজিত ডোভালও তাঁকে এ বিষয়ে কথা না বলতে বলেছিলেন। মালিক বলেছেন যে তিনি অবিলম্বে বুঝতে পেরেছিলেন এবার পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপিয়ে সরকার ও বিজেপি নির্বাচনী ফায়দা তুলবে।
পুলওয়ামার ঘটনা একটি গুরুতর ব্যর্থতা। কারণ ৩০০ কিলোগ্রাম RDX বোঝাই একটি গাড়ি পাকিস্তান থেকে ঢুকে, ১০-১৫ দিন ধরে, নাকের ডগায়, জম্মু ও কাশ্মীরের রাস্তায়, গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, কেউ খেয়াল করেনি।
মালিক বিশদভাবে আলোচনা করেছেন কেন তিনি মেহবুবা মুফতিকে নতুন সরকার গঠন করতে দেননি। ৮৭ সদস্যের বিধানসভায় ৫৬ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বে তিনি ২০১৮-র নভেম্বরে বিধানসভা ভেঙে দিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি মেহবুবা মুফতিকে অভিযুক্ত করেন মিথ্যা বলেছেন বলে, অন্য এক পর্যায়ে তিনি বলেছেন যে, ন্যাশনাল কনফারেন্সের মত যে দলগুলোয় সমর্থন পাচ্ছেন বলে মুফতি দাবি করছিলেন, তারা আলাদাভাবে মালিককে বিধানসভা ভেঙে দিতে বলেছিলেন, কারন horse-tradingএর আশঙ্কা ছিল।
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকাকালীন মালিককে বিজেপি-আরএসএস নেতা রাম মাধব যোগাযোগ করেন একটি হাইড্রো-ইলেকট্রিক স্কিম এবং একটি রিলায়েন্স বীমা স্কিমের অনুমোদনের জন্য। মালিক তা করতে অস্বীকার করেন এই বলে, “ম্যায় গালাত কাম নেহি করুঙ্গা। (আমি কোন ভুল কাজ করব না)”। মাধব সকাল সাতটায় তাঁর বাসভবনে চলে আসেন, তাঁর মত পরিবর্তন করার আরেক দফা চেষ্টা করেন। মালিক বলেছেন যে, সেসময়ে আশেপাশে লোকজনের মধ্যে বলাবলি ছিল যে তিনি উভয় স্কিম অনুমোদন করার জন্য ৩০০ কোটি টাকা পেতে চলেছেন।
মালিক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর সম্পর্কে সম্পূর্ণ “অজ্ঞ” এবং “অজ্ঞাত”। জম্মু ও কাশ্মীরের কেন্দ্রশাসীত অঞ্চল হিসেবে ঘোষনা করা একটি ভুল এবং অবিলম্বে এটাকে স্বশাসীত রাজ্যের মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা উচিত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ‘মাস্ত হ্যায় আপনে মে- টু হেল উইথ’!
মোদি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মালিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। ২০২০-র আগস্টে গোয়ার রাজ্যপালের পদ থেকে সরিয়ে মেঘালয়ে পাঠানো হয়েছিল কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু সরকার সেগুলোকে উপেক্ষা করে। তিনি অভিযোগ করেন যে প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশের লোকেরা দুর্নীতিতে লিপ্ত এবং প্রায়শই PMO-র নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করে থাকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এসবে বিশেষ পাত্তা দেন বলে মনে হচ্ছে না। তখনই মালিক বলেন, “মে সেফলি কেহ সক্ত হুন প্রধানমন্ত্রী কো দুর্নীতি সে বহুত নফরাত নেহি হ্যায়”।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু কার সঙ্গে কখন দেখা করবেন আর কার সাথে করবেন না তা সমস্তটাই ঠিক করে PMO। রাজ্যপাল থাকাকালীন মালিক একবার রাষ্ট্রপতি ভবনে যাচ্ছিলেন কিন্তু শেষ মুহুর্তে তা বাতিল করা হয়।
সাক্ষাৎকারে মালিক আর যা যা বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন
১. তিনি BBC-র বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়াকে ভয়ানক একটি ভুল বলেছেন।
২. প্রধানমন্ত্রী এবং একাধিক মন্ত্রীর মুসলিমবিরোধী আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
৩. তিনি বলেছেন যে আদানি কেলেঙ্কারির কারণে প্রধানমন্ত্রী গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এবং যোগ করেছেন যে এটি গ্রামের স্তরে নেমে এসেছে।
৪. মালিক বলেছেন, সংসদে রাহুল গান্ধীকে বক্তৃতার অনুমতি প্রত্যাখ্যান করা একটি নজিরবিহীন ভুল। আদানি কেলেঙ্কারিতে রাহুল গান্ধী সঠিক প্রশ্ন তুলেছেন, এবং স্পষ্টতই যার উত্তর প্রধানমন্ত্রী দিতে পারবেন না।
৫. গভর্নর হিসাবে সরকার যাঁদের সরকার নিয়োগ করছে তাঁরা নিম্নমানের লোক, ‘third rate people’ বলে অভিযোগ মালিকের।
প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মালিক যা বলেছেন তা নিয়ে তাঁর দ্বিধা নেই কারন তিনি যা বলেছেন তা তথ্য বলে মনে করেন তিনি। এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত কিংবা ভীত তিনি নন। প্রসঙ্গত, যে পরিমাণ নিরাপত্তা তাঁর প্রাপ্য বলে অফিশিয়াল নিরাপত্তা কমিটী সুপারিশ করে তার তুলনায় তিনি পান অনেক কম, সরকার তাঁর বাসস্থানের ব্যবস্থা করেনি, তিনি ভাড়াবাড়িতে থাকছেন এখন।