মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারির মাধ্যমে ভ্যাটিকান সিটির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তাশ, কাওসাচুন নিউজ, ভ্যাটিকান নিউজ প্রভৃতি সংবাদমাধ্যম গত রবিবার, ১২ই মার্চ এই প্রসঙ্গে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
একসময় শীতল যুদ্ধের কেন্দ্রে থাকা নিকারাগুয়া ভ্যাটিকানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য ভ্যাটিকানের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে।
নিকারাগুয়া অভিযোগ জানিয়েছে যে পোপ ফ্রান্সিসের নিকারাগুয়ান সরকারকে স্বৈরাচারী সরকারের সাথে তুলনা করে করা মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই তারা ভ্যাটিকানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ করার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে ১০ই মার্চ, ভ্যাটিকান নিউজ রিপোর্ট করে যে ড্যানিয়েল ওর্তেগার রাষ্ট্রপতিত্বে নিকারাগুয়ায় সামাজিক-রাজনৈতিক এবং সামাজিক অধিকার পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে পোপ তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রেসিডেন্ট ওর্তেগা ছিলেন স্যান্ডিনিস্তা বিপ্লবের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। এই বিপ্লবের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে নিকারাগুয়ায় সোমোজা একনায়কত্ব উৎখাত হয়েছিল। ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ঘটনাবহুল ১১ বছরের শাসনের পর ওর্তেগা ১৯৯০ সালে জাতীয় বিরোধী দল জোটের (UNO) কাছে হেরে যান।
তিনি ২০০৭ সালে আবার ক্ষমতায় আসেন এবং তার শাসনামলে নিকারাগুয়ায় কিছু সাংবিধানিক সংশোধনী ঘটে। ২০২১ সালের নির্বাচনে জেতার পর তার সরকারের বিরুদ্ধে নিকারাগুয়ার ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে বৈরিতামূলক অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
ভ্যাটিকান তার নিজস্ব বিবৃতিতে নিকারাগুয়া থেকে বেশ কয়েকজন ক্যাথলিক চার্চ প্রতিনিধিদের বহিষ্কারের জন্য ওর্তেগা সরকারকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে, নিকারাগুয়ান সরকার দেশের জাতীয় অখণ্ডতা নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার জন্য ক্যাথলিক চার্চকে দোষারোপ করেছে। এই অভিযোগের উপরই ভিত্তি করে, মাতাগাল্পার বিশপ রোল্যান্ডো হোসে আলভারেজ লাগোসকে গত ফেব্রুয়ারিতে নিকারাগুয়ায় ২৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
ভ্যাটিকানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রসঙ্গে নিকারাগুয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভ্যাটিকানকে নিকারাগুয়ার জাতীয় অখণ্ডতার বিরুদ্ধে এই কথিত ষড়যন্ত্রকে সমর্থন করার দায়ে অভিযুক্ত করেছে।
এর আগে, ৯ই মার্চ, চীন, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, ইরান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইরিত্রিয়া, কিউবা এবং বেলারুশের মতো কয়েকটি দেশ নিকারাগুয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনকে তীব্র সমালোচনা করে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) রাজনৈতিক ব্যবহার এবং মানবাধিকারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের কথিত অপচেষ্টার বিরুদ্ধে দেশগুলি সরব হয়। কাওসাচুন নিউজ একটি প্রতিবেদনে এই ঘটনার উল্লেখ করেছে।
নিকারাগুয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের বিরোধিতা করে দেশগুলো অভিযোগের সুরে বলে যে জাতিসংঘ নিকারাগুয়া সম্পর্কে একটি ৩০০ পৃষ্ঠার বৈরি প্রতিবেদন তৈরি করেছে যাচাই না করা কিছু খবরের ভিত্তিতে। বড় সংখ্যক নিকারাগুয়ান খবরের চ্যানেলগুলি যারা ২০১৮ সাল থেকে প্রাসঙ্গিক এবং বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রকাশ করছে, তাদের মোটের উপর বাদ দিয়েই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বলে দেশগুলি অভিযোগ জানিয়েছে।