আগামী মাসেই (ফেব্রুয়ারি) পদত্যাগ করছেন বলে আচমকা ঘোষণা দিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। বৃহস্পতিবার, ১৯শে জানুয়ারি, তিনি নিজেই এ ঘোষণা করেছেন।
লেবার পার্টির সদস্যদের একটি সভায় তিনি বলেন, “আমার জন্য এটিই সময়। আরও চার বছরের জন্য আমার ভান্ডারে যথেষ্ট কিছু নেই”।
২০১৭ সালে জোট সরকারে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন আরডার্ন। এর তিন বছর পর নির্বাচনে তার মধ্য-বামপন্থী লেবার পার্টি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। সাম্প্রতিক ভোটে তাঁর দল ও ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে।
এক মাস আগে পার্লামেন্টের গ্রীষ্মকালীন অবকাশের পর প্রথমবার জনসমক্ষে আসেন আরডার্ন। তিনি লেবার পার্টির সাংগঠনিক কমিটির বার্ষিক সভায় বলেন, ছুটিতে থাকাকালে নেতৃত্ব চালিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তি ফিরে পাবেন বলে আশা করেছিলেন, “কিন্তু আমি তা করতে পারিনি”।
আরডার্ন বলেন, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আগামী ১৪ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত একজন নির্বাচিত এমপি হিসেবে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, “পরবর্তী নির্বাচনে আমরা জিততে পারব না বলে আমি ছেড়ে যাচ্ছি না, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমরা পারব এবং করবো (বিজয় অর্জন)”।
আরডার্ন বলেন, তাঁর পদত্যাগ ৭ই ফেব্রুয়ারির পরে কার্যকর হবে এবং ২২শে জানুয়ারি লেবার পার্টির সভায় ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতাকে বেছে নেওয়া হবে।
উপপ্রধানমন্ত্রী গ্রান্ট রবার্টসন জানান, তিনি নিজের নাম নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির নেতা হওয়ার জন্যে প্রস্তাব করবেন না।
তাঁর পদত্যাগের পেছনে কোনো রহস্য নেই জানিয়ে আরডার্ন বলেন, “আমি একজন মানুষ। আমরা যতদিন পারি ততদিন দিই এবং তারপরে (একদিন) সময় হয়। আমার জন্য, এটিই সময়”।
তিনি বলেন, “আমি চলে যাচ্ছি। কারণ, এই ধরনের বিশেষ সুবিধাযুক্ত চাকরির সঙ্গে বড় দায়িত্ব থাকে। আপনি কখন নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত এবং কখন নন, তা জানাটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে”।
প্রসঙ্গত, আরডার্ন খ্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে মুসলিম গণহত্যার পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টির পক্ষে দাঁড়িয়ে সংহতি জানিয়ে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের দ্বারা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক দক্ষিণপন্থী শক্তির দ্বারা সমালোচিত হন। যদিও তাঁর সরকার মানবিক ভাবে কাজ করার দাবি করে এসেছে, ঘটনাচক্রে তাঁর শাসনকালে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ পড়ায় জনজীবন স্তব্ধ হয় নিউজিল্যান্ডে, এর ফলে যে আর্থিক মন্দা দেখা দেয়, তার থেকে দেশ কে আরডার্ন বের করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা।
তাঁর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন আরডার্ন চীনের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক কে শক্তিশালী করার উপর জোর দেন। তাঁর সরকারের কাজ ছিল ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে বিরোধ থাকা সত্ত্বেও, চীনের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভাল করার। এর ফলে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন শক্তির বিরাগভাজন হন বলেও আশংকা করা হচ্ছে।
চীন হল নিউজিল্যান্ডের সর্ববৃহৎ ব্যবসায়িক সহযোগী দেশ। নিউজিল্যান্ডের মোট বিদেশী বাণিজ্যের ২৩%-ই চীনের সাথেই হয়। নিউজিল্যান্ডের মোট বিদেশী বাণিজ্যের ২৩%-ই চীনের সাথে হয় আর সেই দেশে আমদানি করা পণ্যের ৩২%-ই চীন থেকে আসে।
যদিও আরডার্ন নিউজিল্যান্ডের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী থাকেন কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশ কে বের করার ক্ষেত্রে তাঁর অপারগতার কারণে তাঁর জনসমর্থন হ্রাস পায় বলে মনে করে তাঁর বিরোধীরা।