সম্প্রতি ইউক্রেনজুড়ে একের পর এক মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। যুদ্ধের মাঠে রাশিয়ার দাপট ফেরাতে মরিয়া রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন। অন্যদিকে ইউক্রেনে প্রচুর পরিমাণ আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে প্রক্সি (অন্যের হয়ে) যুদ্ধ চালানোর অভিযোগ তুলছে মস্কো। অন্যদিকে সামরিক বাহিনীতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সেনা অধিনায়কদের বলেন যে, নৌ, বিমান এবং কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করে তোলার প্রয়োজন ছিল। সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১৫ লাখে সম্প্রসারিত করে নিতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত আরও সৈন্যের নিয়োগ দেবে মস্কো।
শোইগু আরও বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর মুখ্য কাঠামোগত অংশগুলোকে জোরদার করে তোলার মধ্যে দিয়েই কেবল দেশের সামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নতুন ভূখণ্ডগত এলাকা ও রুশ ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সুরক্ষা দেয়া সম্ভব।
লুগানস্ক পিপলস রিপাবলিক (এলপিআর) এর সামরিক বিশেষজ্ঞ কর্নেল ভিটালি কিসেলেভ বলেছেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী আর্টিওমভস্ক (বাখমুত) এবং সোলেদার এলাকায় ১৪টি ব্রিগেড ব্যবহার করেছে, রাশিয়ান বাহিনীর সাথে তাদের যুদ্ধের ফলে তাদের ৬০%-৭০% লোকের ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে জাপানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এনএইচকে বলছে, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার ব্যর্থতার জন্য দেশে শোইগুকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। ফলে যুদ্ধ ও পশ্চিমা দেশগুলোর বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার এই “বিশেষ সামরিক অভিযান” এগিয়ে নেওয়াকে প্রাধান্য দেয়া হবে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার, ১৭ই জানুয়ারি, রাতে এক বক্তৃতায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে আরও ট্যাংক, সাজোয়া গাড়ি এবং গোলাবারুদ প্রয়োজন। অত্যন্ত দ্রুত তা ইউক্রেনের সেনার হাতে আসা দরকার। নইলে রাশিয়াকে আটকে রাখা যাবে না।
মূলত পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া এবং যুক্তরাজ্য দ্রুত অস্ত্র পাঠাতে চায় ইউক্রেনকে। কিন্তু তারা সকলেই তাকিয়ে আছে জার্মানির দিকে। একমাত্র জার্মানিই পারে এসব অস্ত্র ইউক্রেনে পৌঁছে দিতে।
অন্যদিকে জার্মানি লেওপার্ডন ট্যাংক ইউক্রেন কে দিতে গররাজি। ট্যাংক দেওয়া নিয়ে মার্কিন-জার্মান দ্বৈরথ প্রকাশ্যে এসেছে, যা ন্যাটোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কে আবার প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা জার্মানির জন্যে বিকল্প পার্টির নেতা পেত্র বিস্ট্রন কে উদ্ধৃত করেছে। বিস্ট্রন বলেছেন যে শেষবার যখন জার্মান ট্যাংক রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে লড়েছিল তখন রাশিয়ান ট্যাংক বার্লিনে এসেছিল।
ব্রিস্টন ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াকু নয়া-নাৎসি বাহিনী কে ব্যঙ্গ করে, নিজের সতীর্থ জার্মান সাংসদদের লক্ষ্য করে বলেন, “(যে সব) জার্মান ট্যাঙ্কগুলি ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে [যুদ্ধরত] – মনে রাখবেন, আপনাদের দাদারা (ইউক্রেনীয় নাৎসিরা) মেলনিক, বান্দেরা এবং তাদের সমর্থকদের সাথে একই কৌশল করার চেষ্টা করেছিলেন। ফলাফল ছিল অপরিসীম দুর্ভোগ, উভয় পক্ষের লক্ষ লক্ষ হতাহত এবং অবশেষে, রাশিয়ান ট্যাঙ্কগুলি এখানে বার্লিনে এসেছিল।”
জার্মানিতে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রায় ৪০% মানুষ জার্মানির ইউক্রেন যুদ্ধে কিয়েভ কে লেওপার্ড ২ ট্যাংক দিয়ে সহযোগিতা করার বিরোধিতা করেছেন। জার্মানির নব্য নিযুক্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন যে জার্মানি ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো পক্ষ নয়।
অন্যদিকে, শুক্রুবার, ২০শে জানুয়ারি, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও প্রেস বিভাগের পরিচালক মারিয়া জাখারোভা জানিয়েছেন যে ইউক্রেন কে মদদ করার নামে পশ্চিমা শক্তিগুলোর অনবরত কিয়েভ কে অস্ত্র যোগান ও অন্যান্য সহযোগিতা করা এই সংঘর্ষ কে আরও বাড়িয়ে দিতে থাকবে।
মার্কিন প্রচার পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনের দিকে জাখারোভা দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যেখানে বলা আছে যে রুশ ভূখণ্ডের অংশ ক্রিমিয়া কে আক্রমণ করতে কিয়েভ কে অতিরিক্ত অস্ত্র যোগান দেওয়ার কথা ভাবছে মার্কিন প্রশাসন। জাখারোভা ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লায়েন-এর কথাও উল্লেখ করেন এই বলে যে তিনি ইউরোপীয় দেশগুলো কে আহবান করেছেন ইউক্রেন কে সব রকমের অস্ত্র দিতে যা তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে।
রুশ জাতীয় প্রতিরক্ষা ম্যানেজমেন্ট কেন্দ্র জানিয়েছে যে ইউক্রেন নিজেদের ব্যর্থতা গোপন করতে ও রাশিয়ার সাফল্য কে খর্ব করতে বারবার মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে জনগণের মন কে আচ্ছন্ন করতে চাইছে ও তাদের বিপথে চালিত করতে চাইছে। “বিশেষ সামরিক অভিযানের অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক সাফল্যের মধ্যে, কিয়েভ সরকার রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনীকে অসম্মানিত করতে এবং সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য রাশিয়ান নাগরিকদের উপর তথ্যের চাপের মাত্রা প্রসারিত করছে।” – বিবৃতিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে তাস।
ইউক্রেনে “বিশেষ সামরিক অভিযান” শুরু করার পর থেকেই রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম ও সরকার অভিযোগ করছে যে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ইউক্রেনের ‘কাল্পনিক’ বিজয়ের কাহিনী প্রকাশ করছে ও রাশিয়ার বিশাল সাফল্যের ঘটনা চেপে যাচ্ছে।