মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি বাড়িতে ঢুকে বন্দুকধারীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে একই পরিবারের চার প্রজন্মের ছয় সদস্যকে হত্যা করেছে। স্থানীয় সময় সোমবার, ১৬ই জানুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্যাঞ্চলের টুলারে কাউন্টিতে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ বলছে, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং মাদক চোরাকারবারীরা এ হামলা চালিয়েছে। তবে এ হামলায় ওই বাড়িতে অবস্থান করা অন্য তিন ব্যক্তি বেঁচে গেছেন।
স্থানীয় পুলিশ ও পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১৬ বছর বয়সী মা, তার ১০ মাস বয়সী ছেলে এবং শিশুর দাদী ও নানীও রয়েছেন।
জানা গেছে, এ “পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যার” দায়ে পরিচিত দুই সন্দেহভাজনকে খুঁজছে পুলিশ।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে টুলারে কাউন্টি শেরিফ মাইক বউড্রোক্স ওই সন্দেহভাজনদের নাম প্রকাশ না করলেও তিনি জানান, কর্তৃপক্ষ এ হামলা সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছে।
এদিকে ওই বাসভবনে তল্লাশি চালিয়ে গাঁজা এবং মেথামফেটামাইনস (নেশা দ্রব্য) উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বউড্রোক্স বলেন, এর কোনটাই দুর্ঘটনাক্রমে ঘটেনি। এটি পূর্বপরিকল্পিত, ইচ্ছাকৃত এবং ভয়ঙ্কর ছিল।
তদন্তকারীরা এরইমধ্যে ভুক্তভোগীদের পরিচয় প্রকাশ করেছে। তারা হলেন, ৭২ বছর বয়সী রোজা প্যারাজ, ইলাদিও প্যারাজ জুনিয়র (৫২), জেনিফার আনালা (৫০), মার্কোস প্যারাজ (১৯), এলিসা প্যারাজ (১৬) এবং ১০ মাস বয়সী নাইকোলাস প্যারাজ।
বউড্রোক্সের জানান, হামলার সময় একজন জীবিত ব্যক্তি মেঝেতে শুয়ে ছিলেন এবং দরজার বিপরীতে পা রেখে হামলাকারীদের ঘরে প্রবেশ করতে বাধা দেন।
এ শেরিফ আরও জানান, ওই ব্যক্তি এমন ভয়ের মধ্যে ছিলেন যে, তিনি আর দরজা আটকে রাখতে পারছিলেন না। এছাড়া বাকি দু’জন গুলি শুরু হলে কাছাকাছি একটি ট্রেলারে নিজেদের লুকিয়ে রাখেন।
বউড্রোক্সের মতে, ওই শিশু এবং তার মা ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিল। ফরেনসিক প্রমাণ দেখা গেছে, হত্যাকারীরা তাদের মাথায় গুলি করে।
গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’এর সান ফ্রান্সিসকো অফিস এ তদন্তে সহায়তা করছে এবং অভিযুক্তদের তথ্যের জন্য ১০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কেন্দ্রীয় ক্যালিফোর্নিয়া এলাকায় মেক্সিকান ড্রাগ কার্টেলের কার্যকলাপ বেড়েছে বলেও জানান বউড্রোক্স।
তিনি বলেন, আমাকে এটি খুব স্পষ্ট করে বলতে দিন যে, এই বাড়ির সমস্ত লোকেরা গ্যাং সদস্য ছিলেন না। ওই মা এবং শিশু ছিল নির্দোষ শিকার।
এসব হত্যাকাণ্ড “উচ্চ-পদস্থ গ্যাংয়ের ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড দেয়ার অনুরূপ” বলে মনে হচ্ছে বলে জানান তিনি। নিহতদের এমন জায়গায় গুলি করা হয়েছিল যাতে দ্রুত তাদের মৃত্যু হয়, যা একজন শ্যুটারের পক্ষে জানা সম্ভব।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে এ পর্যন্ত শত শত আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং শুক্রবারের মধ্যে নিহতদের ময়না তদন্তের ফলাফল পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।
এলিসা প্যারাজের দাদা স্যামুয়েল পিনা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন যে, তিনি সেন্ট্রাল ক্যালিফোর্নিয়ার গোশেনে শিশুটির বাবার পরিবারের সাথে বসবাস করছিলেন।
হামলায় শিশুটির চাচা, দাদী ও নানীকেও হত্যা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।