ভারতের আবহাওয়া বিভাগ আগামী পাঁচ দিনের জন্য রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা-চণ্ডীগড়-দিল্লি এবং পশ্চিম উত্তর প্রদেশ সহ উত্তর ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যের জন্য তীব্র তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে, ইতিমধ্যেই দিল্লিতে তাপমাত্রা রেকর্ড ৪৭° ডিগ্রিতে পৌছেছে । আর কলকাতাবাসীতো পূর্বেই তাপপ্রবাহের তান্ডব অনুভব করেছে।
গ্রীষ্মের আগমনের পর থেকে ভারতের বিভিন্ন অংশে যে তীব্র তাপপ্রবাহের হানা চলছে, তা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। অন্তত এমনটাই দাবি এক গবেষণা গোষ্ঠীর।
মার্কিন ভিত্তিক জলবায়ু কেন্দ্র গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। রাজধানী দিল্লি সহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা রেকর্ড হারে বৃদ্ধি পেতে পারে, যা বছরের এই সময়ের স্বাভাবিক গড়ের তুলনায় ৬° ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন এই তীব্র তাপপ্রবাহ গুলিকে আরও অনেক বেশি বিপদজ্জনক করে তুলেছে, ক্লাইমেট সেন্ট্রালের বিজ্ঞানের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু পার্শিং একথা রিপোর্টে বলেছেন। তিনি আরও বলেন,
এই সকল অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশে তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ৪৫° ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি হবে, এবং সম্ভবত তার পরেও বৃদ্ধি পাবে, ফলে তাপ-সম্পর্কিত অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও তীব্র হতে চলেছে।
রাত্রিকালীন তাপমাত্রা তাপপ্রবাহ চলাকালীন ৩৪° ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার সম্ভাবনা নেই, ফলে আরবান হিট আইল্যান্ড ইফেক্টের প্রভাব ও বৃদ্ধি পাবে, এটি এই ঘটনাটিকে আরও বেশি উদ্বেগজনক করে তোলে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জীবন, জীবিকা, অর্থনীতি এবং বাস্তুতন্ত্রের ওপর অস্বাভাবিক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে, ভারত যেভাবে চরম জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে, যেমন চরম তাপমাত্রা, স্বল্প বর্ষা, বন্যা , অসময় অতিবৃষ্টি , এগুলির ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) অনুমান করেছে যে প্রচণ্ড তাপ এবং আর্দ্রতার কারণে শ্রমঘণ্টা নষ্ট হওয়ায় ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপির ৪.৫ শতাংশ পর্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
ভারতে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনের কারণে ভারতীয় জিডিপির ২.৮ শতাংশ ব্যয় করতে হচ্ছে প্রতি বছর। এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ভারতের অর্ধেক জনসংখ্যার জীবনযাত্রার মান হ্রাস হবার আশঙ্কা রয়েছে I রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অর্থনৈতিক ও নীতি গবেষণা বিভাগ (ডিইপিআর) বলছে পর্যাপ্ত প্রশমন নীতির অনুপস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২১০০ সালের মধ্যে ভারত তার বার্ষিক জিডিপির ৩ থেকে ১০ শতাংশ হারাতে পারে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তন একা ভারতের সমস্যা নয়। এর ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির ১৮ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি মুছে যেতে পারে (ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম অনুসারে)। ফলে বিশ্বের শক্তিশালী দেশ গুলিকে সময় থাকতে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে । নাহলে ভবিষ্যত আরও দূর্বিষহ হয়ে উঠবে।