Close

নাৎসিবাদ বনাম জায়নবাদ নাকি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ? (পর্ব ২)

ইসরায়েল গঠনে শ্রম জায়নবাদের ভুমিকা অপরিসীম। কিন্তু এই আন্দোলন ইতিহাসের কোন অধ্যায়ের সাথে এক সূত্রে বাঁধা? লিখছেন ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী।

ইসরায়েল গঠনে শ্রম জায়নবাদের ভুমিকা অপরিসীম। কিন্তু এই আন্দোলন ইতিহাসের কোন অধ্যায়ের সাথে এক সূত্রে বাঁধা? লিখছেন ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী।

নাৎসিবাদ বনাম জায়নবাদ নাকি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ? (পর্ব ১)

এখনো যদি ফিলিস্তিনে গিয়ে সেই জলপাই গাছগুলিকে জীবন্ত অবস্থায় দেখতে পাই, তাহলে আশ্চর্য হব না।


এযাবৎ জিয়েভ জাভতিনোস্কিকে নিয়ে প্রচুর শব্দ খরচা করেছি, তার কারণ ইসরায়েলের জন্ম, কর্ম, নীতি, রীতি, রেওয়াজের পেছনে এই ব্যাক্তির বেশ ভালো ভুমিকা রয়েছে। কিন্তু তার প্রসঙ্গে আবার পরে আসব। আপাতত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক যার নাম লেবার জায়নিসম বা শ্রম জায়নবাদ। এটি হারজোগের নাৎসিবাদ সম্পর্কিত বক্তব্যের সাথে কিভাবে নেতিবাচক অর্থে জড়িত তা জানতে হলে লেখাতি মন দিয়ে পড়তে হবে। তার আগে ১৯৪৮ সালের পর থেকে ইসরায়েলের গদিবদলের ইতিহাসটা একটু ঘেঁটে দেখা প্রয়োজন।


ইসরায়েলের পট পরিবর্তনের ইতিহাস (আংশিক)


ডেভিড বেন-গুরিয়ন ছিলেন ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রাথমিক জাতীয় প্রতিষ্ঠাতা এবং সেই সাথে রাষ্ট্রের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। বেন-গুরিয়নের নেতৃত্বে, ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে বিভিন্ন ইহুদি মিলিশিয়াকে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এর সাথে একীভূত করা হয়েছিল। এই সময়েই বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি আরব জনতাকে ফিলিস্তিনি ভূখন্ড থেকে বহিষ্কার এবং উচ্ছেদ করা হয়েছিল। যুদ্ধের পর, বেন-গুরিয়ন ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে, তিনি দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় প্রকল্পগুলির সভাপতিত্ব করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিলেন। তিনি ইহুদি অভিবাসীদের ইসরায়েলে অভিবাসন তদারকি করেছিলেন। তার বৈদেশিক নীতির একটি প্রধান অংশ ছিল হলোকাস্টের সময় নাৎসিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য ক্ষতিপূরণ চুক্তির মাধ্যমে পশ্চিম জার্মানির সাথে সম্পর্কের উন্নতি করা। তিনি আরব গেরিলা আক্রমণে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অভিযানের নেতৃত্ব দেন এবং ১৯৫৬ সালে সুয়েজ সংকটের সময় ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সাথে মিলে মিশর আক্রমণ করেন। মৃত্যুর পর, বেন-গুরিয়নকে টাইম ম্যাগাজিনের বিশ শতকের ১০০ জন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের নাম দেওয়া হয়েছিল।

আইডিএফ-ইউএস মিলিটারি কো-অপরেশন

ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইহুদি অভিবাসন যে ‘সেমেটিক-বিরধী’ চিন্তা বা হলোকাস্টের ফলাফল নয়, বরং তার অনেক আগে থেকেই এই পরিকল্পনা ছিল, তার আভাস বেন-গুরিয়নের একটি স্মৃতিচারণমূলক লেখা থেকে পাওয়া যায়। স্মৃতিচারনায় তিনি বলেছেন, “আমাদের অনেকের ক্ষেত্রেই, ইহুদি-বিরোধী অনুভূতির সাথে জায়নবাদ-এর প্রতি আমাদের উত্সর্গের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনও ইহুদি-বিরোধী নিপীড়নের শিকার হইনি। প্লোনস্ক উল্লেখযোগ্যভাবে এটি থেকে মুক্ত ছিল … তবুও, এবং আমি মনে করি এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, যে তুলনীয় আকারের পোল্যান্ডের যেকোনো শহর তুলনায় প্লোনস্কই ইরেৎজ ইজরায়েলে সর্বোচ্চ সঙ্খ্যায় ইহুদিদের পাঠিয়েছিল। আমরা পালানোর নেতিবাচক কারণে নয় বরং একটি স্বদেশ পুনর্গঠনের ইতিবাচক উদ্দেশ্যের জন্য দেশত্যাগ করেছি… প্লোনস্কে জীবন যথেষ্ট শান্তিপূর্ণ ছিল।“ (সূত্র- মেমওয়ারস, ডেভিড বেন-গুরিয়ন, পৃ-৩৬)


প্লোনস্কে যে জীবন দুর্বিষহ ছিল না তার প্রমাণ স্বরূপ তিনি আরও বলেছেন, “তবে, ইহুদিরা একটি সংক্ষিপ্ত, কেন্দ্রীভূত গোষ্ঠী গঠন করেছিল যা জেলাগুলির অভ্যন্তর দখল করেছিল যখন পোলিশেরা আরও বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রান্তবর্তী এলাকায় কৃষকদের মধ্যে বসবাস করত। ফলস্বরূপ, যখন ইহুদি ছেলেদের একটি দল একটি পোলিশ গ্যাংয়ের সম্মুখীন হত তখন পরবর্তীটি প্রায় অনিবার্যভাবে একটি একক শহরতলির প্রতিনিধিত্ব করত এবং এইভাবে ইহুদিদের তুলনায় লড়াইয়ের সম্ভাবনায় নগণ্য প্রতিপন্ন হবে, যারা [ইহুদি] প্রাথমিকভাবে তাদের সংখ্যা কম হলেও পুরো কোয়ার্টার থেকে দ্রুত শক্তিবৃদ্ধি করতে পারে। তাদের ভয় করা দূরের কথা, তারা বরং আমাদের ভয় পেত। তবে, সাধারণভাবে, সম্পর্ক দূরত্বপূর্ণ হলেও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।“ (সূত্র- মেমওয়ারস, ডেভিড বেন-গুরিয়ন, পৃ-৩৬)


লেবার জায়নবাদ ও নাৎসিবাদ; একই প্রোডাক্ট তবে ব্র্যান্ড আলাদা


এই ডেভিড বেন-গুরিয়ন, ইসরায়েলে লেবার জায়োনিস্ট বা শ্রম জায়নবাদী আন্দোলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুখগুলির অন্যতম। এই শ্রম জায়নবাদ কী বস্তু? থিওডর হার্জেল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং চেইম ওয়েইজম্যান কর্তৃক প্রবর্তিত “রাজনৈতিক জায়নবাদী” প্রবণতার বিপরীতে, শ্রম জায়নবাদীরা বিশ্বাস করেনি যে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা যুক্তরাজ্য, জার্মানি, বা সাবেক অটোমান সাম্রাজ্যের মতো শক্তিশালী দেশগুলির কাছে আবেদন করার মাধ্যমে একটি ইহুদি রাষ্ট্র তৈরি করা যাবে। বরং, তারা বিশ্বাস করত যে ইহুদি শ্রমিক শ্রেণীর প্রচেষ্টার মাধ্যমেই ইহুদি রাষ্ট্র তৈরি হতে পারে ইসরায়েলের ভূমিতে আলিয়া বা ইহুদী অভিবাসন করে এবং গ্রামীণ কিবুতজিম (ছোট ছোট কৃষিভিত্তিক কমিউন) ও মোশাভিম (কো-অপারেটিভ কৃষিভিত্তিক গোষ্ঠী) এবং একটি শহুরে ইহুদি সর্বহারা শ্রেণীর একটি শ্রমিক ইহুদি সমাজ তৈরির মাধ্যমে একটি দেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে ইসরায়েল তৈরি করতে হবে। রথসচাইল্ডের পরিবারের অর্থায়নের কারণে প্রথম আলিয়া শ্রম জায়নবাদীদের প্রতিক্রিয়ার সম্মূখীন হয়েছিল। শ্রম জায়নবাদ-এর দুই প্রতিষ্ঠাতা নাচম্যান সিরকিন এবং বের বোরোচভ এই বসতিগুলির সমালোচনা করেছিলেন, কারণ সেখানে ইহুদি শ্রমিকের চেয়ে আরব শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল।

নাকবার ৭০ বছর যাপনে প্রতিবাদ


এই শ্রম জায়নবাদ কিভাবে পরবর্তি ইসরায়েলকে রূপ দিয়েছিল তা নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন গারসন শাফির। তার গবেষণা তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন তার বই ল্যান্ড, লেবর অ্যান্ড দ্য অরিজিন্স অফ ইসরায়েলঈ-পালেস্তিনিয়ান কনফ্লিক্ট (১৮৮২-১৯১৪) বইতে। ১৯১৪ সালের পূর্বে ভবিষ্যত ইসরায়েলি রাষ্ট্র গঠনে ভূমি অধিগ্রহণের সমস্যা এবং শ্রমশক্তির সংমিশ্রণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কীভাবে অবদান রেখেছিল তা তিনি তুলে ধরেছেন। তার বইতে তিনি লিখেছেন ১৯১০সালের পরেই সমবায় বন্দোবস্তের (পরে কিবুতজমিন) উত্থান কার্যকর ‘ইহুদি উপনিবেশ’ এবং ইসরায়েলি রাষ্ট্র গঠনের জন্য একটি অনিচ্ছাকৃত সমাধান প্রদান করে। দ্বিতীয় আলিয়ার পর আরব শ্রমিকদের সংখ্যার ক্রমহ্রাসমানতার কথা উল্লেখ করে তিনি তার বইতে শ্রম জায়নবাদের আদর্শে ছদ্ম সমাজবাদের উপর প্রকট জাতীয়তাবাদের আধিপত্যের দিকেও স্পষ্টভাবে নির্দেশ করেন।


১৯৩০-এর দশকের মধ্যে, শ্রম জায়নবাদী আন্দোলন আকারে এবং প্রভাবে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং প্যালেস্টাইনের ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের মধ্যে তথা আন্তর্জাতিকভাবে উভয়াংশেই “রাজনৈতিক জায়নবাদ”-কে সর্বস্তরে প্রায় দখল করে ফেলেছিল। প্রসঙ্গত, ইশুভের অনেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেবার জায়নিস্টদের প্রাধান্য ছিল, বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন-এর মধ্যে যা হিস্তাদ্রুত নামে পরিচিত। শ্রম জায়নবাদ ছিল ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে এবং পরবর্তীকালে জায়নবাদের অন্যতম প্রধান ধারা। এটি ইসরায়েলে এমন প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য দায়ী যা আজও বিদ্যমান, উদাহরণস্বরূপ ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। আইডিএফ-এর পূর্বসূরিরা ১৯০৪ সালে দ্বিতীয় আলিয়ার সময় ইহুদিদের প্রতিরক্ষায় গোপন মিলিশিয়া গোষ্ঠী হিসাবে কাজ করা শুরু করেছিল।

১৯১৪ সালের আগে, একদিকে বলশেভিকবাদ থেকে ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতা এবং অন্যদিকে অটোমান প্যালেস্টাইনে ইহুদি শ্রম আন্দোলনের একীকরণ জায়নবাদের পক্ষে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু স্বীকৃতি এবং বৈধতা অর্জন করা সম্ভব করে তোলে। শ্রম জায়নবাদীরা সেই সময়ে অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের থেকে আলাদা ছিল যেহেতু অ-জায়নবাদী শ্রমিক সংগঠনগুলি ছিল আন্তর্জাতিকতাবাদী, যথারীতি ইহুদি জাতীয়তাবাদ তথা জায়নবাদ বিরোধী। অর্থাৎ শ্রম জায়নবাদ আদতে সেই ন্যাশনাল সোশ্যালিসম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাম ইহুদিদের নেতৃত্ব মূলত দুটি স্বতন্ত্র উৎস থেকে এসেছিল। প্রথম অংশটা ছিল তারা যারা জায়নবাদের জনক হিসেবে ১৮৮০ সালে আন্তর্জাতিকতাবাদী ও বিশ্বজনীন চিন্তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল এবং অন্য অংশটা ছিল তারা যারা ১৯০৫ সালের পরে রাশিয়া ছেড়ে চলে আসে।

ন্যাশনাল সোশ্যালিজম বা “জাতীয় সমাজতন্ত্র” শব্দটি মার্কসবাদী আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্র এবং মুক্ত-বাজার পুঁজিবাদ উভয়ের বিকল্প হিসাবে সমাজতন্ত্রের একটি জাতীয়তাবাদী পুনঃসংজ্ঞা তৈরি করার প্রচেষ্টা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। নাৎসিবাদ শ্রেণী দ্বন্দ্ব এবং সার্বজনীন সাম্যের মার্কসীয় ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, সেইসাথে আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধিতা করেছিল এবং নতুন জার্মান সমাজের সকল অংশকে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে “সাধারণ ভালো”-এর অধীন করতে রাজি করাতে চেয়েছিল। তারা রাজনৈতিক স্বার্থকে অর্থনৈতিক সংগঠনের প্রধান অগ্রাধিকার হিসাবে গ্রহণ করেছিল, যা অর্থনৈতিক সমাজতন্ত্রের পরিবর্তে সমষ্টিবাদ বা সাম্প্রদায়িকতার সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মেলে।

শ্রম জায়নবাদের অন্যতম প্রবক্তা মোসেস হেস ১৮৬২ সালে তার রোম এবং জেরুজালেম: দ্য লাস্ট ন্যাশনাল কোয়েশ্চেন লেখায় জাতীয়তার প্রশ্ন নিষ্পত্তির উপায় হিসাবে ইহুদিদের প্যালেস্টাইনে বসতি স্থাপনের জন্য যুক্তি দিয়েছিল। হেস এক ধরণের ‘সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের’ প্রস্তাব করেছিলেন যেখানে তার মতে, ইহুদিরা “জমির পুনঃপ্রাপ্তির” প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃষিনির্ভর হয়ে উঠবে যা ইহুদি সম্প্রদায়কে একটি সত্যিকারের জাতিতে রূপান্তরিত করবে যাতে ইহুদিরা মধ্যস্থতাকারী অ-উৎপাদনশীল বণিক শ্রেণী (অন্ততঃ যেভাবে তিনি ইউরোপীয় ইহুদিদের উপলব্ধি করেছিলেন) হওয়ার পরিবর্তে সমাজের উৎপাদনশীল স্তরগুলি দখল করবে।

বের বোরোচভ, মোজেস হেসের কাজকে আরও বিস্তৃত করে পরবর্তীতে একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন যা ইহুদি সমাজের “উল্টানো পিরামিড” সংশোধন করবে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে ইহুদি সমাজ সুস্থ হবে না যতক্ষণ না উল্টানো পিরামিড ঠিক করা হয় এবং একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইহুদি আবার শ্রমিক ও কৃষক হয়ে ওঠে। (সূত্র- “টেক্সটস কনসার্নিং জায়োনিজম: পোলেই জ়িওন- আওয়ার প্ল্যাটফর্ম” বই দ্রষ্টব্য)

জোনাথন ফ্র্যাঙ্কেল তার প্রফেসি অ্যান্ড পলিটিক্স: সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং রাশিয়ান ইহুদি, ১৮৬২-১৯১৭ বইতে বলেছেন যে ১৯০৫ সালের পরে, শ্রম ইহুদিবাদী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ডভ বের বোরোচভ হঠাৎ করে স্বতঃস্ফূর্ততা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের চিন্তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি লিখেছেন, এর আগে, বোরোচভ ফিলিস্তিনি ঔপনিবেশিকরণকে অভিজাত ভ্যানগার্ড দ্বারা সম্পাদিত একটি প্রস্তুতিমূলক মিশন হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন; কিন্তু তিনি ১৯০৫ সালের বিপ্লবের পরে একটি তত্ত্ব আমদানি করেছিলেন যা সরাসরি নির্দেশ করে যে ইহুদি জনগণের দ্বারা ফিলিস্তিনের ঔপনিবেশিকরণ ঠিক কতটা অনিবার্য ছিল।

অন্যদিকে জার্মানির নাৎসিবাদের মতোই এই শ্রম জায়নবাদী আন্দোলনও জার্মানির ভল্কিচ আন্দোলন থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছিল। জার্মানির নাৎসিবাদীরা যেমন ইহুদী এবং কমিউনিস্টদের ছদ্ম শত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়ে তার উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তায় তথাকথিত নৈতিকতা আরোপ করতে চেয়েছিল, ফিলিস্তিনে শ্রম জায়নবাদীরাও তাই করেছিল, আরবদের ছদ্ম শত্রু হিসেবে তুলে ধরে এবং তথাকথিত সর্বহারার ক্ষমতায়নের ছত্র ছায়ায় ইহুদি জাতির শ্রমিকদের ক্ষমতায়নের প্রশ্নকে বার বার উসকে দিয়ে। এই শ্রম জায়নবাদী আন্দোলনের ফলে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ইসরায়েলের লেবার পার্টি।

হারজোগ বলেছিলেন, “যারা ইউরোপ আমেরিকায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে রাস্তায় নামছে তারা নাৎসিবাদের সমর্থক… আমি বলছিনা তারা আক্ষরিক অর্থেই নাৎসিবাদকে সমর্থন করে। কিন্তু তারা যে ধরণের কাজ করছে তারা এর চিন্তা ধারাকে সমর্থন করছে।” মজার ব্যাপার হারজোগ নিজেই লছবার পার্টির সদস্য। হারজোগ বিশ্বে শ্রম জায়নবাদের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বাহক এই মুহূর্তে। এবার বলুন সরাসরি নাৎসিবাদের মতাদর্শগত ভ্রাতার মতো একটা আদর্শ বহন করে বিপরীত পক্ষকে এভাবে নাৎসিবাদী বলে দাগিয়ে দেওয়া নেহাৎ ছেলেমানুষী ছাড়া আর কিইবা হতে পারে? এখানেই শেষ নয়। আরও তথ্য নিয়ে পরের পর্বে আসছি।

চলবে…

ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতার ছাত্রী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, যিনি শ্রম, কৃষি ও রাজনীতি নিয়ে রিপোর্টিং করেন।

One Comment
scroll to top