ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলের সামনে ফিলিস্তিন সমর্থকদের বিক্ষোভ শুরু হয় । তিনি বুধবার যখন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন, তখন শত শত ফিলিস্তিনপন্থী, যুদ্ধ-বিরোধী বিক্ষোভকারী কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলের কাছে সমবেত হয়ে নেতানিয়াহু এবং গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের নিন্দা জানায়।
বিক্ষোভকারীদের অনেকে “ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন” স্লোগান দিয়ে প্ল্যাকার্ড বহন করে যেখানে লেখা ছিল “নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করো” এবং “ইসরায়েলের জন্য সকল সাহায্য বন্ধ করো।”
ক্যাপিটল যাবার সড়ক পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউর দু’ধার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে ধরে নিয়ে যায়, যারা নেতানিয়াহুর কনভয় আটকানোর জন্য রাস্তায় বসে পরেছিল।
ক্যাপিটল ঘিরে স্টিলের তৈরি উঁচু বেড়া স্থাপন করা হয়েছে এবং সুবিশাল প্রতিরক্ষা বাহিনীর ব্যাপক সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নেতানিয়াহুর একটি কুশপুতুল নিয়ে আসে, যার মাথায় সিং এবং মুখ থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যাচ্ছিল। এর আগেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র আগমনে দেশটির রাজধানীতে বিক্ষোভের ঝড় উঠেছে । কংগ্রেসের একটি অফিস ভবনে অবস্থান ধর্মঘট হলে সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়।
কিছু বিক্ষোভকারী ইসরায়েলের নিন্দা করেছে। তবে অন্যরা ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নেতানিয়াহুকে হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে চাপ দিয়েছে।
ক্যাপিটল পুলিশ জানায়, ক্যানন হাউস অফিস ভবনে অবস্থান ধর্মঘটের অভিযোগে মঙ্গলবার প্রায় ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ‘ইহুদি ভয়েস ফর পিস’ জানায়, আরও অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের মধ্যে ইহুদী ধর্মযাজক বা র্যাবাই ছিলেন।
বুধবার সকালে ক্যাপিটল ভবনের সামনে অর্থোডক্স ইহুদিরা রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। দূরে পুলিশের সাইরেন বাজলে বিক্ষোভকারীরা ‘বিশ্বব্যাপী ইহুদিরা ইসরায়েলি রক্তাক্ত বর্বরতার নিন্দা জানায়’ এবং ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখায় এবং ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিতে থাকে । আরেকটি প্ল্যাকার্ডে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানানো হয়। এরপর ক্যাপিটল পুলিশের কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার সতর্কতা জারি করেন, এরপর বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করেন ।
বুধবার ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। যে ভাষণে তিনি ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধ শেষে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল মিলে নতুন একটি জোট গড়ার আহ্বান জানান। গাজা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইসরাইল গাজা পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিতে চায় না। বরং নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজার পরিচালনার দায়িত্ব ওই সব ফিলিস্তিনির হাতেই ছেড়ে দেওয়া উচিত, যারা ইসরাইলকে ধ্বংস করতে চায় না।
নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে মার্কিন সাংসদ রশিদা তালাইব কংগ্রেসের ভেরর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে একটি প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন। যেখানে লেখা ছিলো “গণহত্যার অপরাধী”।
মার্কিন কংগ্রেসে তার ভাষণের এই রূপ মন্তব্যের পর । হামাস নেতা সামি আবু জুহরি এক সাক্ষাৎকারে বলেন ,”নেতানিয়াহুর ভাষণ ছিল মিথ্যায় ভরা। প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থতা ও পরাজয় ঢাকতে তার সেনাবাহিনী গাজার জনগণের বিরুদ্ধে যে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ করেছে, তার ওই ভাষণ সেগুলো ঢাকতে সফল হবে না।”
তিনি আরও বলেন ,”যেকোনো পক্ষ থেকে ইসরাইলের সঙ্গে কোনো ধরনের জোট ‘শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ করা হবে।”
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেছেন, “ফিলিস্তিনি জনগণই… একমাত্র তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন কে তাদের শাসন করবেন । নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জনের একমাত্র পথ হলো একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম এবং আমরা আমাদের এ অবস্থানে অটল আছি।”
গত বছর ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে । ওই দিন থেকেই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজা এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন ।