ইসরায়েল হামাসের ক্রস-বর্ডার আক্রমণে ক্ষেপে উঠছে কারণ বস্তুতই তার কাছে পশ্চিমাদের ছাড়পত্র আছে, বললেন এরদোগান। তুর্কির রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ‘ফিলিস্তিনের গণহত্যার’ বিষয়ে পশ্চিমাদের নিষ্ক্রিয়তাকে নিশানায় রেখে বললেন ইসরায়েল ৭ই অক্টবরের হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় বখে যাওয়া বাচ্চার মতো আচরণ করেছে। শনিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধে একটি যৌথ আরব-ইসলামিক সম্মেলনে এরদোগান পশ্চিমা দেশগুলিকে পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করে তিনি অন্যান্য বৈশ্বিক সংঘর্ষের বিষয়ে পশ্চিমা নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ইসরায়েলী সরকার পশ্চিমাদের বখে যাওয়া বাচ্চার মতো আচরণ করছে, এবং তারা যে পরিমাণ ক্ষতি করেছে তার ক্ষতিপূরণ তাদের দিতে হবে।“
এরদোগান এই সম্মেলনে বলেন, “এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়; যে পশ্চিমা দেশগুলি সর্বদা মানবাধিকার আর মুক্তির কথা বলে, তারাই আজ ফিলিস্তিনের গণহত্যার সময়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে”। তিনি আরও বলেন, “আমরা অভূতপূর্ব বর্বরতার সম্মুখীন, যেখানে হাসপাতাল, স্কুল এবং শরণার্থী শিবিরে বোমা বর্ষিত হচ্ছে আর বেসামরিকদের হত্যা করা হচ্ছে”। তুর্কী নেতা শনিবার যে সম্মেলনে তাঁর বক্তব্য রাখেন তা যৌথ ভাবে আরব লীগ এবং ইসলামিক বিশ্বের দ্বারা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের উপর আলোচনার উদ্দ্যেশ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নিজের মন্তব্যের সাথে এরদোগান সংযোজন করেন যে পশ্চিমা দেশগুলি “ইসরায়েলে যুদ্ধবিরতির আহ্বানটুকুও রাখছে না”। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন যে তিনি দূর-দূরান্ত পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ বিরতির “কোনও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন না”, এই বিতর্ক তুলে ধরে যে, এতে হামাসের সুবিধা হবে। যদিও এযাবৎ ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের বিষয়ে বহু বিতর্কিত মন্তব্য তিনি করেছেন এবং উপহাস ও ভর্ৎসনার সম্মুখীন হয়েছেন। এর আগে তিনি ফিলিস্তিনে মৃতের সংখ্যার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় হামাস একটি ২১২ পৃষ্টার নথি প্রকাশ করেন যেখানে মৃতের এবং আহতদের সমস্ত তথ্য বিস্তারে দেওয়া ছিল। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মত অনুযায়ী বর্তমানে এই সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি। শনিবারের সম্মেলনে এরদোগান গাজায়, নির্দিষ্ট করে হাসপাতালগুলিতে জ্বালানির সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে জোর দিয়ে বলেন যে, তুর্কি প্রয়জনীয় ত্রাণ সামগ্রী সম্বলিত দশটি বিমান পাঠাবে। এই বিমান মিশরের এল-আরিষ বিমানবন্দর হয়ে গাজায় পৌঁছাবে। তিনি ওআইসি তহবিল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন, যার মাধ্যমে গাজার নবনির্মাণ করা যেতে পারে। তিনি আরও জানান যে এই তহবিল প্রতিষ্ঠায় প্রয়জনীয় সাহায্য করবেন।
ইসরায়েল হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় গাজার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে অভূতপূর্ব বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। যুদ্ধের শুরুতেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাসকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেছেন। ইসরায়েলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন গত শুক্রবারের সংঘাতে মোটামুটি ১২০০ জন ইসরায়েলী নাগরিক নিহত হয়েছেন যার মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক। অন্যদিকে শুক্রবার পর্যন্ত গাজায় নিহতদের সংখ্যা ১১,০০০ দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এই নিহতদের মধ্যে ৪০ শতাংশই শিশু। স্বাধীন সহযোগিতা সংস্থাগুলি এর আগেও মানবাধিকার সঙ্কেটের ঘনিভবনের বিষয়ে সতর্ক করেছে। তারা জানিয়েছেন যে ত্রাণসামগ্রী সঙ্কুচিত হচ্ছে যখন আক্রান্ত মানুষদের প্রয়োজন এবং তাদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। স্পেসেক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক বলেছেন যে, “গাজায় শিশু হত্যাই হামাসকে সংগঠিত করছে”।