রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করলে, বাইডেনের অনুরোধ সত্ত্বেও উৎপাদন বাড়াতে রাজি হয়নি সৌদি আরব। ফলস্বরূপ সৌদি আরবকে “আদেশ অমান্য” করার “পরিণাম” সম্পর্কে সতর্ক করে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট সূত্রে জানা যাচ্ছে এই বিবাদ সম্পর্কিত কিছু নথি ফাঁস হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সৌদিকে এই সতর্কতামূলক হুমকির উত্তরে সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গোপনে মার্কিন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দিয়েছেন। এই বিষয়ে ফাঁস হওয়া নথির উদ্ধৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টে।
প্রসঙ্গত, বাইডেন প্রশাসন বলেছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপরিশোধিত খনিজ তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করা বা না করা সম্পর্কে রিয়াধের সিদ্ধান্তের পরে তারা সৌদির সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন করবে।
সৌদির যুবরাজ, যিনি বিশেষত এমবিএস নামে পরিচিত, সতর্ক করেছিলেন যে বাইডেন সৌদি আরবকে শাস্তি দিলে তিনি মার্কিন প্রশাসনের সাথে আর লেনদেন করবেন না। তিনি “ওয়াশিংটনের জন্য বড়সর অর্থনৈতিক পরিণতি”-র হুমকি দিয়েছেন বলে গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে।
যে নথি থেকে এই হুমকির ইতি বৃত্তান্ত জানা যাচ্ছে তা একটি ডিসকর্ড সার্ভারে ফাঁস হয়েছে। তবে মন্তব্যটি ইন্টারসেপ্টেড কমিউনিকেশনের অংশ নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যক্তিগতভাবে পাঠানো কোনও বার্তা ছিল তা স্পষ্ট হয়নি এখনো।
বিডেন গতবছর অক্টোবরে রিয়াধের সিদ্ধান্তের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন যখন রাশিয়া সহ প্রধান তেল উৎপাদনকারী OPEC+ গ্রুপ দিনে দুই মিলিয়ন ব্যারেল উৎপাদন কমাতে সম্মত হয়েছিল। এর ফলে বিপুল হারে পেট্রোপণ্যের দাম বাড়তে থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। ইউক্রেনের সংঘাতের জের ধরে মস্কোর তেল বাণিজ্যের ওপর ওয়াশিংটন এখনও নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে।
“ওরা রাশিয়ার সাথে যা করেছে তার কিছু না কিছু ফল ভোগ করতে হবে,” মার্কিন প্রেসিডেন্ট সে সময় সিএনএনকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কোনও সম্ভাব্য ব্যবস্থার উল্লেখ না করেই৷
জো বাইডেন তার নির্বাচন পূর্ববর্তী প্রচারের পথে ২০১৮ সালের ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে (যার জন্য রিয়াধ দুর্বৃত্ত এজেন্টদের উপর দোষারোপ করেছিল) যুবরাজের ভূমিকা নিয়ে সৌদি আরবকে একঘরে করার হুমকি দিয়েছিলেন।
যাইহোক, এই হুমকিটির বাস্তবায়ন এখনও দেখা যায়নি। হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ সদস্যরা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে বিডেন প্রশাসন এই মুহূর্তে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে রাজি নয়। এক দশকেরও পুরনো চুক্তির অধীনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে নিরাপত্তা প্রদান করে এবং বিনিময়ে তার তেলের প্রাপ্তির অধিকার বজায় রাখে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী মুদ্রা হিসাবে উত্থাপন করার জন্য ডলারের বিনিময়ে কেনে।
৩৭ বছর বয়সী সৌদি যুবরাজ, যিনি তার বাবা, বাদশাহ সালমানের পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের দৈনন্দিন বিষয়গুলির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত, জানা গেছে যে তিনি বাইডেনকে ব্যক্তিগতভাবে উপহাস করেছেন, তার গাফিলতি এবং মানসিক ত্রুটি নিয়ে মজা করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে সৌদি চাপের মুখে পড়ার অভিযোগ তুলেছেন।