Close

সোভিয়েতের বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আবেগে ভাসলো রাশিয়া, আক্রমণাত্মক পুতিন

৯ই মে মস্কোয় নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্যারেডে পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হন রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিন।

সোভিয়েতের বিজয় দিবসে আবেগে ভাসলো রাশিয়ার, আক্রমণাত্মক পুতিন

মঙ্গলবার, ৯ই মে রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৭৮তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে। মস্কোর রেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবস অনুষ্ঠানে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন এবং সোভিয়েত রেড আর্মির প্রবীণরা উপস্থিত ছিলেন।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেশ কয়েকটি প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি মস্কোর বিজয় দিবসে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত রাষ্ট্রপতিরা হলেন, উজবেক রাষ্ট্রপতি শাভকাত মিরজিওয়েভ, কিরগিজ রাষ্ট্রপতি সাদির জাপারভ, কাজাখ রাষ্ট্রপতি কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ, বেলারুশের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো এবং তাজিক রাষ্ট্রপতি ইমোমালি রহমান এ ছাড়াও আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানও অনুষ্ঠানে অংশ নেন। প্রসঙ্গত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ১৫ টুকরো হয়। সেই ১৫টি দেশের মধ্যে আটটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা মস্কোর বিজয় দিবসে অংশ নিলেন।

বিজয় দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে প্রবীণ লাল ফৌজের সেনা এবং রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিন সহ অন্যান্য প্রাক্তন সোভিয়েত দেশ গুলোর রাষ্ট্র প্রধানদের আবেগে বিহ্বল দেখাচ্ছিল। প্রসঙ্গত নাৎসি জার্মানির মোকাবিলায় প্রায় তিন কোটি সোভিয়েত নাগরিক ও সেনা প্রাণ হারান।

 রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিন তার ভাষনে রাশিয়া বিরোধী নীতির জন্য এবং “মহান দেশ প্রেমিক যুদ্ধ” (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সোভিয়েত নাম) এর অর্জন গুলোকে অস্বীকার করার জন্য পশ্চিমাদের সমালোচনা করেন। 

পুতিন পশ্চিমাদের নব্য নাৎসিবাদকে তোল্লাই দেওয়া, বিশেষত ইউক্রেনকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়াকে বলকানাইজ করার সমালোচনা করেন। পুতিন বলেন “যেকোনো শ্রেষ্ঠত্বের মতাদর্শ তার প্রকৃতিগতভাবে বিরক্তিকর, অপরাধমূলক এবং মারাত্বক।” 

পুতিন আরো বলেন “আন্তর্জাতিক অভিজাতরা তাদের ব্যতিক্রমবাদের উপর জোর দিয়ে থাকে; তারা মানুষকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়, সমাজকে বিভক্ত করে, রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও অভ্যুত্থানকে উস্কে দেয়, ঘৃণা, রুশ বিদ্বেষ এবং আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করে, ঐতিহ্যগত পারিবারিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে যা মানুষকে মানুষ করে”।

ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান বিশেষ সামরিক অভিযানের কথা উল্লেখ করে পুতিন এই উত্তেজনার জন্য পশ্চিমাদের দোষারোপ করেন এবং তাদের সীমান্তের কাছে সমস্যা তৈরির জন্য অভিযুক্ত করেন। পুতিন বলেন “মাত্রাতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অহংকার এবং পোদ্দারি অনিবার্যভাবে ট্র্যাজেডির দিকে নিয়ে যায়। এটি ইউক্রেনের জনগণ এখন যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে তার কারণ” পুতিন দাবি করেন।

 এই বছর মস্কোতে রাশিয়ার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে ৮,০০০ সৈন্য অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে ইউক্রেনের বিশেষ সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণকারী ৫৩০ জন যোদ্ধা এবং ১২৫টি সামরিক হার্ডওয়্যার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

কুচকাওয়াজটিতে পতাকা বহনকারী অনার গার্ডের ব্যানার গ্রুপ রাশিয়ার পতাকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের কিংবদন্তি কাস্তে হাতুড়ি লাল পতাকা নিয়ে শুরু হয়েছিল যা লাল ফৌজে ১৯৪৫ সালের মে মাসে রাইখস্টাগের উপরে উত্তোলন করেছিল।

প্রায় ৩০টি পদাতিক কলাম বিজয় দিবস কুচকাওয়াজে অংশ নেয়। সোভিয়েত রেড আর্মির একটি কিংবদন্তি টি-৩৪ ট্যাঙ্ক যান্ত্রিক কলামের নেতৃত্ব দেয়। Tigr-M সশস্ত্র যান, BTR-82A সশস্ত্র কর্মী বাহক, বুমেরাং পদাতিক যুদ্ধের যান, ইস্কান্দার-এম কৌশলগত এম ইসাইল সিস্টেম, S-400 ট্রায়াম্ফ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট মিসাইল সিস্টেম এবং ইয়ারস ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) লঞ্চারও বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেয়।

 বিজয় দিবসের প্যারেডের পরে, প্রাক্তন সোভিয়েত সৈন্যদের নেতারা রেড স্কোয়ারে অজানা সৈনিকের সমাধিতে ফুল দিয়েছিলেন, যা নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নকে রক্ষা করার জন্য প্রাণ হারানো সমস্ত লাল ফৌজের সৈন্যদের স্মৃতি সৌধ। 

Leave a comment
scroll to top