চীন সফরে আগত ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ’র সাথে বৃহস্পতিবার, ৬ই এপ্রিল, বৈঠক করেন চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। বৈঠকে শি ম্যাক্রোঁ কে দুই বছর পরে চীনে আসার জন্যে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। ম্যাক্রোঁকে শি জানান যে যদিও দুই বছরে বিশ্বের পরিস্থিতিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু তার ফলে চীন ও ফ্রান্সের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়েনি। শি ও ম্যাক্রোঁ’র বৈঠকে ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের সংবাদ সংস্থা সিএমজি।
শি ও ম্যাক্রোঁ’র বৈঠকের পরে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে চীনা রাষ্ট্রপতি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ চীনের ‘দুই অধিবেশনে’র পর চীন সফরে আসা কোনো প্রথম ইউরোপীয় দেশের প্রধান। আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ ও গভীরভাবে বৈঠকে মিলিত হয়েছি এবং একমত হয়েছি যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দুটি স্থায়ী সদস্য, দুটি স্বাধীন বড় দেশ, বিশ্বের বহুমেরুকরণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রায়নকে বেগবানকারী হিসেবে দু’দেশের উচিত স্থিতিশীল, কল্যাণকর, উদ্ভাবনশীল এবং ইতিবাচক চীন-ফ্রান্স সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কের পথে এগিয়ে চলা, যাতে চীন-ইউরোপ সম্পর্কের নতুন পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।”
চলমান রুশ-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে দুই পক্ষই উদ্বেগ প্রকাশ করে। শি ও ম্যাক্রোঁ’র বৈঠকের আগে অবশ্য ফরাসি রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন যে তিনি চীন কে অনুরোধ করবেন যেন চলমান সংঘর্ষে বেইজিং কোনো ভাবেই রাশিয়া কে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা না করে। কিন্তু শি ও ম্যাক্রোঁ’র বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রপতি সেই রকম কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। বরং তিনি চীন ও ফ্রান্স এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেন। শি একই সাথে ইউরোপিয়ান কমিশনের রাষ্ট্রপতি উরসুলা ফন ডেয়ার লায়েন এর সাথেও বৈঠক করেন।
সাংবাদিকদের চীনা রাষ্ট্রপতি জানান যে, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, পারস্পরিক কল্যাণে অবিচল থাকা, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান জোরদার এবং পরস্পরকে সমর্থন এবং বিশ্বব্যবস্থার সুবিন্যাস করার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।” শি বলেন যে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা কামনা করে চীন এবং ইউক্রেন সংঘর্ষে বেইজিং চায় সব পক্ষই সংযম প্রদর্শন করুক।
শি সাংবাদিকদের জানান যে শান্তি সংলাপ বেগবান এবং রাজনৈতিক উপায়ে ইউক্রেন সংকট সমাধানে অবিচল থাকবে চীন। ফ্রান্সের সঙ্গে মিলে আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি সংযম বজায় রেখে সংকটের অবনতি না ঘটনার দাবি জানাতে চায় চীন। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব কে কেন্দ্র করে বিশ্বে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের ফাটল ও দুই লড়াকু পক্ষের একে অপরকে দেওয়া হুমকি নিয়েও দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করে চীন।
চীনা রাষ্ট্রপতি রুশ ও ইউক্রেনের কাছে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার না-করা এবং পরমাণু যুদ্ধ না চালানোর পাশাপাশি যে কোনো পরিস্থিতিতে রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্র রোধের দাবিও জানান। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ করেন “খাদ্য, শক্তি, অর্থ, পরিবহন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় সংকটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি সংকটের নেতিবাচক প্রভাব, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, কমাতে।”
অন্যদিকে শি ও ম্যাক্রোঁ’র বৈঠকে ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে ও শান্তির ব্যাপারে আলোচনা হওয়ার পরে রাশিয়া জানিয়েছে যে যদিও বর্তমানে যুযুধান দুই পক্ষ কে শান্তির জন্যে একমত করানোর সম্ভাবনা চীনের আছে, কিন্তু ইউক্রেনের পরিস্থিতি এই মুহূর্তে শান্তির জন্যে পরিপক্ক নয়। ফলে মস্কো কে তার বিশেষ সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে হবে।