মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সোমবার, ১৬ই জানুয়ারি, ইউক্রেন সফর করেছেন। এই সময় ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে সাক্ষাত করেন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধে কিয়েভকে ওয়াশিংটনের ‘অবিচল প্রতিশ্রুতির’ বিষয়ে ফের নিশ্চয়তা দেন এই কর্মকর্তা। মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শার্মানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইউক্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি স্থায়ী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অংশীদারিত্ব উন্নত করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে দেশটির রাজধানী কিয়েভে বৈঠক করেন।
ইউক্রেনে সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলে শার্মান ছাড়াও আছেন মুখ্য সহকারী জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা জন ফাইনার, ও প্রতিরক্ষার আন্ডার সেক্রেটারি ডাঃ কলিন এইচ কাহল। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিনিধি দল জেলেনস্কি, তার প্রেসিডেন্ট দপ্তরের সদস্য, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকজি রেজনিকভ ও ইউক্রেনের অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাত করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক বিবৃতিতে বলেন, এ সফরের লক্ষ্য হচ্ছে, বিনা উস্কানিতে চালানো রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন ও তাদের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির বিষয় পুন:নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, এ প্রতিনিধি দল ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত ইউক্রেনের যুব সমাজেরও কথা শুনেন। এক্ষেত্রে তারা ইউক্রেনের যুদ্ধে জেলেনস্কির বিজয়, মুক্তি লাভ এবং পুনর্গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের ১১তম মাসে তুমুল লড়াই চলার সময় শার্মান এ সফর করেন।এর আগে গত মাসে জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাত করেন। সেখানে বাইডেন তাঁর প্রশাসনের তরফ থেকে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য জরুরি সামরিক ও আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রায় ৪,৫০০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে বারবার পশ্চিমী শক্তিগুলোর দ্বারা ইউক্রেনের নয়া-নাৎসি বাহিনী কে সামরিক ও আর্থিক মদদ দেওয়ার ঘটনায় চরম ক্ষিপ্ত হয়েছে রাশিয়া। সম্প্রতি ব্রিটেনের দ্বারা ইউক্রেন যুদ্ধের জন্যে কিয়েভ কে ট্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় হুমকি দিল রাশিয়া।
সোমবার, ১৬ই জানুয়ারি, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই হুঁশিয়ারি দেন। পেসকভ বলেন, ইউক্রেনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে রাশিয়া-বিরোধী লক্ষ্য অর্জন করতে চায় লন্ডন। কিন্তু ব্রিটেনের সরবরাহ করা ট্যাংক ইউক্রেনে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেবে রুশ বাহিনী।
তিনি আরও বলেন, পোল্যান্ড এবং ব্রিটেন নতুন করে ইউক্রেনকে যে উন্নতমানের অস্ত্র দিতে চেয়েছে তাতে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফলে কোনো পরিবর্তন আসবে না, তবে এতে এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে এবং ইউক্রেনের জন্য সমস্যা বাড়বে।
এর আগে গত সপ্তাহের প্রথম দিকে ব্রিটিশ সরকার ইউক্রেনকে চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। শনিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভালোদিমির জেলেনস্কিকে ট্যাংক সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সুনাক বলেন, ব্রিটেন ইউক্রেনকে এ ধরনের উন্নত ট্যাংক সরবরাহ করবে। চ্যালেঞ্জার হচ্ছে ব্রিটেনের প্রধান যুদ্ধ ট্যাংক। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর এসব যুদ্ধ ট্যাংক কিয়েভের বাহিনীকে “রুশ সেনাদের পিছনে ঠেলে” দিতে সাহায্য করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ এর দশকের শেষদিকে নির্মিত ব্রিটিশ চ্যালেঞ্জার ট্যাংকগুলো ২০ বছরেরও বেশি পুরানো। তবে ইউক্রেনের মাটিতে এটিই হবে সবচেয়ে আধুনিক ট্যাংক। সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যাংকগুলো ইউক্রেনকে আরও ভালো সুরক্ষা এবং আক্রমণে সাহায্য করবে। তবে এই ব্রিটিশ চ্যালেঞ্জার ট্যাংকগুলো ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে শক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে পারবে বলে নিশ্চয়তা ব্রিটেন দেয়নি।