Close

চতুর্থ দফার নির্বাচনেও রাজ্যে বহাল থাকলো হিংসার ঘটনা

বাংলায় বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ ঘটনায় অভিযুক্ত শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এবারও রাজ্যবাসীর হিংসা-মুক্ত নির্বাচনের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। 

চতুর্থ দফার নির্বাচনেও রাজ্যে বহাল থাকলো হিংসার ঘটনা

নির্বাচন শেষে কড়া পাহারায় ইভিএম নিয়ে ফিরছেন ভোট কর্মীরা। তেলেঙ্গানার একটি কেন্দ্রে। ছবি সত্ত্ব নির্বাচন কমিশন।

বাংলায় চতুর্থ দফার ভোটও সম্পন্ন। সোমবার চতুর্থ দফায় রাজ্যের আট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয় বোলপুর, বীরভূম, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বহরমপুর এবং আসানসোলে। বিকেল ৬টা পর্যন্ত রাজ্যে ভোট পড়ল প্রায় ৭৬% শতাংশ।

চতুর্থ দফায় সারাদিন কোথায় কোথায় হিংসার ঘটনা ঘটেছে সেদিকে দিন শেষে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

মন্তেশ্বরের তুল্লাবাজারে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। ঘোষকে দেখা মাত্র ‘গো-ব্যাক’ ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। তারপরই পাথর ছুড়ে ভাঙা হয় ঘোষের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ির কাঁচ।  জখম হন এক নিরাপত্তা কর্মী। ঘোষের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা।

দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গি গার্লস হাইস্কুলে ৮২ নম্বর বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে তুলকালাম। তৃণমূল-বিজেপি দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত এলাকা।

দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্ণণ ঘোড়ুইকে ধাক্কা ও মারের  অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।

চাপড়ার বানিয়াখাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৮ ও ৬০ নম্বর বুথে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) [সিপিআই (এম)] এজেন্টদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।

নদিয়াতে চাপড়ার শোনপুকুর গ্রামে রাতভর তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ তোলেন গ্রামবাসীরা। বুথে যেতে তাঁদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সিপিআই (এম) এজেন্টকে মারধর করে বুথে বসতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামবাসীরা।

ভোট শুরুর আগেই রক্ত ঝরল কৃ্ষ্ণনগর লোকসভার নাকাশিপাড়া আড়ারবেঘিয়া গ্রামে। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিআই (এম) কর্মীদের হাতাহাতি বেঁধে যায়। মাথা ফাটে সিপিআই (এম) কর্মীর। অভিযোগ, কালীগঞ্জ থানা এলাকার আড়ারবেঘিয়া গ্রামের ৩ নম্বর বুথের কাছে ক্যাম্পে বসতে বাধা দেওয়া হয় সিপিআই (এম) কর্মীদের। তাই নিয়েই অশান্তির সূত্রপাত। এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

নদিয়ার দু-দুটি জায়গায় মাথা ফাটে সিপিআই (এম) কর্মীদের। তেহট্টের থানারপাড়া থানা এলাকায়  তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে মাথা ফেটে যায় এক সিপিআই (এম) কর্মীর। অভিযোগ, নারায়ণপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬ নম্বর বুথের সিপিআই (এম) পোলিং এজেন্টকে বসতে বাধা দেয় তৃণমূল কংগ্রেস। এই নিয়ে দু’পক্ষের হাতাহাতি বেঁধে যায়। তার থেকেই অশান্তি ছড়ায়। পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে থানারপাড়া থানার পুলিশ।

মুর্শিদাবাদের সালার থানার ১২৩ নম্বর বুথে কংগ্রেস এজেন্টকে বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।

মন্তেশ্বরে বিজেপি এজেন্টদের বাধা, ৫৬ ও ৫৭ নং বুথে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ। আক্রান্ত এজেন্ট, অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।

দূর্গাপুরের পান্ডবেশ্বরে, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের ২৬ নং বুথের বিজেপি এজেন্ট আক্রান্ত। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ, গুরুতর আহত আক্রান্ত এজেন্ট।

বর্ধমান দূর্গাপুর লোকসভার গলসিতে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনল পুলিশ।

বেলডাঙার মির্জাপুরে ৮৫,৮৬ নং বুথের বাইরে অবৈধ জমায়েত ঘিরে গোলমাল, পরিস্থিতি সামলালো কেন্দ্রীয় বাহিনী। অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেস।

বর্ধমানের কাঞ্চন নগরে বিকাল ৫টার পর বিজেপি কর্মীদের খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠলো তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি দেখতে হাজির বিজেপি প্রার্থী ঘোষ।

বহরমপুরের বড়ঞায় কংগ্রেস এজেন্টকে বুথে বসতে বাধা। বাড়লো উত্তেজনা তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের মধ্যে। পুলিশের লাঠিচার্জ, এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি।

নদিয়ার কালিগঞ্জে, সিপিআই (এম) পঞ্চায়েত প্রধানের আত্মীয়কে বেধড়ক মার, ফাটল মাথা, অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।

ভোটের আগের রাতে কেতুগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী খুন। বোমা ছোড়া ও কোপানোর অভিযোগ। অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসেরই দুই জনের বিরুদ্ধে। পুরানো শত্রুতার জেরে খুন বলে জানাল কমিশন।

বীরভূমে, হাসানের সাহাপুরে ২৪৮ নং বুথের বিজেপি এজেন্টকে গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা গেলো। অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, ভিডিও ভাইরাল।

এগুলি ছাড়া রাজ্যের আরও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ ঘটনায় অভিযুক্ত শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এবারও রাজ্যবাসীর হিংসা-মুক্ত নির্বাচনের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। 

[সকাল থেকে এখনও পর্যন্ত চতুর্থ দফার ভোটে ১,৭০৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। দলগত ভাবে অভিযোগ রয়েছে ২৬১টি। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রয়েছে সিপিআই (এম)-র তরফে। তারা কমিশনে ইতিমধ্যে ১৫৩টি অভিযোগ জানিয়েছে। বিজেপি জানিয়েছে ২৬টি অভিযোগ। কংগ্রেস জানিয়েছে ৭৯টি অভিযোগ। এ ছাড়া, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে তিনটি অভিযোগ গিয়েছে কমিশনে।]

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র যিনি ভূ-রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আগ্রহী। তাঁর লেখার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলিকে ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।

Leave a comment
scroll to top