বিশ্বের সর্ববৃহৎ নির্বাচন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভারতের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন নরেন্দ্র মোদীর সরকার এবং বিরোধী গণতন্ত্র টিকে থাকা উভয়ের জন্যই মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আটজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, একজন প্রাক্তন রাজ্যপাল এবং বেশ কয়েকজন প্রধান নেতা আজ ২০ টিরও বেশি আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মাঠে নেমেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি, জিতেন্দ্র সিং, কিরেন রিজিজু, অর্জুন রাম মেঘওয়াল, সঞ্জীব বালিয়ান, তেলেঙ্গানার প্রাক্তন রাজ্যপাল তামিলিসাই সুন্দররাজন, লোকসভায় কংগ্রেসের উপনেতা গৌরব গগৈ এবং আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।
এই লোকসভা নির্বাচন-এ বিজেপি ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৭০টি জয়ের লক্ষ্য রেখেছে। এই লক্ষ্য তার ২০১৯ সালের ফলাফলের তুলনায় একটি বড় বৃদ্ধি৷ প্রধানমন্ত্রী এনডিএ জোটের পক্ষে ৪০০ আসনে জয়লাভের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন৷ গত নির্বাচনে, এনডিএ ৩৫২টি আসন জিতেছিল, যা ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩০৩টি আসন পেয়েছিল। অপর দিকে বিজেপিকে কোনঠাসা করার অঙ্গীকার করেও বিভিন্ন আসনে জোট সঙ্গীদের সাথেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ইন্ডিয়া জোটভুক্ত দলগুলি। যদিও ভোটের আগেই একেরপর এক দলবদল এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আক্রমণে জর্জরিত হয়েছে ইন্ডিয়া জোট। যদিও উত্তরে নিজেদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করার আশা করছে কংগ্রেস। এদিকে কংগ্রেস শাসনাধীন কর্নাটকে ভালো ফল করবে বলে জানিয়েছে বিজেপি। তাছাড়া উত্তর-পূর্বে ২৫টির মধ্যে ২২টি আসনেই এনডিএ জয়লাভ করবে বলে মনে করছেন তারা।
এই নির্বাচনের সাত দফার প্রথমটিতে ২১টি রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিতে মোট ১০২ আসনে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে তামিলনাড়ু (৩৯), রাজস্থান (১২), উত্তর প্রদেশ (৮), মধ্যপ্রদেশ (৬), উত্তরাখণ্ড (৫), অরুণাচল প্রদেশ (২), মিজোরাম (১), নাগাল্যান্ড (১), সিকিম (১) এবং মেঘালয়ে (২) সব আসনেই প্রথম দফায় ভোট হচ্ছে। এছাড়াও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (১), পুদুচেরি (১), এবং লাক্ষাদ্বীপে (১) সব আসনে নির্বাচন হয়েছে। অন্যদিকে আসাম ও মহারাষ্ট্রে পাঁচটি করে, বিহারে চারটি, পশ্চিমবঙ্গে তিনটি, মণিপুরে দুটি এবং ত্রিপুরা, জম্মু ও কাশ্মীর ও ছত্তিশগড়ে একটি করে আসনে নির্বাচন হয়েছে।
সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের তিন আসনেই বিভিন্ন বুথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীরা। এই মর্মে কমিশনের মোট ৫৫৬টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে ৩৫৬টি অভিযোগের সমাধান করা হয়েছে এবং ৯৯ টি অভিযোগ খারিজ হয়েছে। কমিশনের কাছে আসা অভিযোগের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র। এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে মোট ২৬৯টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগের নিরীখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আলিপুরদুয়ার। এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে ১৬২টি অভিযোগ এসেছে। এছাড়াও জলপাইগুড়ি থেকে ১২৫টি অভিযোগ এসেছে কমিশনের কাছে। কোচবিহার থেকে মোট ১০টি বোমা উদ্ধার হয়েছে। সবগুলো ক্রুড বোমা। প্রশাসন বোমাগুলিকে নিষ্ক্রিয় করেছে। এছাড়া কোথাও কোনও বোমাবাজি হয়নি বলেই খবর।
রাজনৈতিক দলের তরফে কমিশনের কাছে যে অভিযোগ জমা পড়েছে তাম মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সিপিআইএম। নির্বাচন কমিশনে ভোট সংক্রান্ত মোট ৩৭টি অভিযোগ দায়ের করেছে তারা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শাসকদল তৃণমূল। দলীয় ভাবে মোট ২০টি অভিযোগ দায়ের করেছে তারা। তৃতীয় স্থানাধিকারী হিসেবে বিজেপি দায়ের করেছে ১৪টি অভিযোগ। অভিযোগ করেছে কংগ্রেসও। উত্তরবঙ্গে ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের কাছে মোট ২টি অভিযোগ দায়ের করেছে তারা।
এছাড়াও পিটিআই সূত্রে খবর, মণিপুরে, বিষ্ণুপুরের একটি ভোটকেন্দ্র থেকে গোলাগুলির বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। মণিপুরের কোন দুটি আসন যথাক্রমে অভ্যন্তরীণ মণিপুর এবং বাইরের মণিপুরের কোনটিতে গুলি চালানো হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। অভ্যন্তরীণ আসনটি ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির থাউনাওজাম বসন্ত কুমার সিং জিতেছিলেন। ওই আসনে আবারও প্রার্থী হয়েছেন থাউনাওজাম বসন্ত কুমার সিং। বাইরের আসনটি, যা তফসিলি উপজাতি প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত, গতবার সেখান থেকে নাগা পিপলস ফ্রন্টের নেতা কাচুই টিমোথি জিমিক জিতেছেন। তিনি আবারও মাঠে নেমেছেন। এই নির্বাচনে এনপিএফ বিজেপির মিত্র। পূর্ব ইম্ফল জেলায় একটি ভোটকেন্দ্র ভাঙচুর করা হয়েছে। গত প্রায় একবছর যাবৎ সহিংসতা চলার কারণে মণিপুরে নির্বাচনকালীন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মণিপুরের বিধানসভার ২৮টি আসনের মধ্যে ১৫টিতে আগামী ২৬শে এপ্রিল ভৈট হবে। এদিকে তামিলনাড়ুতে, সালেম জেলার ভোটকেন্দ্রে দুজন বয়স্ক লোক এবং একজন ৭৭ বছর বয়সী মহিলা মারা গেছেন।
লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফাতেই ভোটের পরিমাণ লক্ষাধিক বলে জানা গিয়েছে কমিশন সূত্রে। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত গোটা দেশে মোট ৬০.০৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে, ৭৭.৫৭ শতাংশ। তামিলনাড়ুতে ভোট পড়েছে ৬৩.২ শতাংশ, রাজস্থানে ৫০.৩ শতাংশ, উত্তর প্রদেশে ৫৭.৫ শতাংশ এবং মধ্যপ্রদেশে ৬৩.৩ শতাংশ। সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচনের জন্য, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশে যথাক্রমে ৬৭.৫ এবং ৬৪.৭ শতাংশ ভোট পড়েছে৷