বিরোধীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ব্যবহার করার অভিযোগ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আগেই উঠেছিল। কিন্তু তার মধ্যেই চলছিল লাগাতার ধরপাকড়। হিমন্ত সোরেন থেকে কেজরিওয়াল হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্ততেও অভিযুক্তদের ধরতে পারলেই সরাসরি শ্রীঘরে চালান করছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। এবার ভারতের শীর্ষ আদালত কার্যত ডানা ছেঁটে দিল ইডির।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট জানালো আদালতের অনুমতি না থাকলে অভিযুক্তদের কিছুতেই হেফাজতে নিতে পারবে না এই সংস্থা। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, বিশেষ আদালতে বিচারাধীন ‘বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইন’ (পিএমএলএ) মামলার ১৯ নম্বর ধারায় (অর্থ নয়ছয়) অভিযুক্তকে ইডি গ্রেফতার করতে পারবে না। ইডি যদি তেমন কোনও অভিযুক্তকে হেফাজতে রাখতে চায়, তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষ আদালতে আবেদন করতে হবে। এইদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ নির্দেশ ঘোষণা করে বলেছে, “যদি এক জন অভিযুক্ত সমনে সাড়া দিয়ে আদালতে হাজির হন, তবে তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য ইডিকে সংশ্লিষ্ট আদালতেই আবেদন করতে হবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া হাজিরা দেওয়া অভিযুক্তকে হেফাজতে নিতে পারবে না ইডি।”
সেই সঙ্গে দুই বিচারপতির বেঞ্চের আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশ হল, “পিএমএলএ মামলায় অভিযুক্ত যদি সমন মেনে আদালতে হাজিরা দেন, তবে তাঁর আলাদা ভাবে জামিনের আবেদন করার কোনও প্রয়োজন নেই।” আদালত জানিয়েছে এ ক্ষেত্রে পিএমএলএ-র ৪৫ নম্বর ধারার জোড়া শর্ত কার্যকরী হবে না বলেও বৃহস্পতিবার জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। ৪৫ নম্বর ধারার ওই জোড়া শর্তের প্রথমটি জানাচ্ছে, যখন পিএমএলএ মামলার অভিযুক্ত জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করবেন তখন প্রথমে শুনানির জন্য সরকারি আইনজীবীর সম্মতি প্রয়োজন হবে। সরকারি আইনজীবী যদি সন্তুষ্ট হন যে, অভিযুক্ত দোষী না-ও হতে পারেন এবং মুক্তি পেলে অনুরূপ অপরাধ করার সম্ভাবনা নেই, তবেই অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে কার্যকরী হওয়া সংশোধিত পিএমএলএ আইনে গ্রেফতারি, তল্লাশি, সমন পাঠানো বা নগদ সম্পত্তি আটকের ক্ষেত্রে ইডির হাতে যথেচ্ছ ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন এবং বিরোধী সংগঠন অভিযোগ করে। ইডির এই ক্ষমতা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের বিরোধী বলেও অভিযোগ উঠেছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
ইডি তদন্ত শুরুর আগে যে ইসিআইআর (এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফরমেশন রিপোর্ট) দায়ের করে, তা গ্রেফতারির আগে দেখানো-সহ বিভিন্ন দাবিতে ভুরি ভুরি মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। গত ২০২২ সালের ২৭শে জুলাই অবসর নেওয়ার মাত্র দুইদিন আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি খানউলকর তাঁর রায়ে জানিয়েছিলেন যে, ইসিআইআর দেখানোর প্রয়োজন নেই, তা ইডির নিজস্ব নথি। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের নির্দেশে ইডির এই অতিরিক্ত ক্ষমতা কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল।