গত ২১শে সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন চলাকালীন, বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি ‘চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্য’ নিয়ে আলোচনা করার সময় বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) সাংসদ কুনওয়ার দানিশ আলীকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন। সংসদের নিম্নকক্ষে চন্দ্রযান-৩ মিশনের উপর আলোচনায় অংশ নেওয়ার সময়, বিধুরি দানিশ আলীকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ সহ আরও বিভিন্ন বিশেষণে অকথ্য গালিগালাজ করেন, যার ফলে সংসদে বিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা শুক্রবার সংসদ ভবনে বিধুরির করা আপত্তিকর মন্তব্যের ‘গুরুতর নোট’ নিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি হলে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার জন্য তাকে সতর্ক করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এদিকে বিধুরীর আপত্তিকর মন্তব্যের পরপরই প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সংসদে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, “সদস্যের মন্তব্যে বিরোধীরা আঘাত পেলে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।”
রাজনাথ সিং আরও বলেছিলেন যে উক্ত মন্তব্য তিনি সকর্ণে শোনেননি যদিও তা বিরোধী সদস্যদের আঘাত করলে তাদের কার্যধারা থেকে মুছে ফেলার জন্য সভাপতিকে অনুরোধ করেছিলেন। কংগ্রেস সদস্য কে সুরেশ, যিনি সভাপতিত্বে আসীন ছিলেন, বলেছেন যে তিনি ইতিমধ্যেই কর্মকর্তাদের মন্তব্যটি মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও সামাজিক মাধ্যমে এই মন্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। এক্স তথা টুইটারে ঝড় ওঠে ‘অ্যারেস্ট রমেশ বিধুরি’ দাবিতে।
তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহয়া মৈত্র রমেশ বিধুরির বক্তব্যের ভিডিও এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ পোস্ট করে লিখেছেন, ওবিসিদের ও মুসলিমদের সাথে দুর্ব্যাবহার করা, বিজেপি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ – বেশিরভাগই এখন এতে ভুল কিছু দেখেন না। নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় মুসলমানদের নিজেদের ভূমিতে এমন ভয়ের অবস্থায় বসবাস করতে বাধ্য করেছে যে তারা সেই অবস্থায় হাসছে এবং সবকিছু সহ্য করছে। দুঃখিত কিন্তু আমি এটা তুলে ধরছি করছি। মা কালী আমার শিরদাঁড়া ধরে রেখেছেন।
মহুয়া মৈত্র স্পিকার ওম বিড়লাকে বিধুরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এক্স-এ একটি টুইটে, তিনি লিখেছেন, ‘মর্যাদাপুরুষ’ ওম বিড়লা- আপনাকে আহ্বান করার জন্য আমার বিরুদ্ধে নির্দ্বিধায় একটি বিশেষাধিকার প্রস্তাব শুরু করুন। যেকোনো কমিটির মুখোমুখি হতে পারলে আমি খুশি হব। কিন্তু আমি আপনাকে এখানে এবং এখন জিজ্ঞাসা করছি- আপনি রমেশ বিধুরি-র বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?
কংগ্রেস নেতা পবন খেরাও লোকসভায় বিএসপি সাংসদকে নিয়ে তাঁর মন্তব্যের জন্য বিধুরির নিন্দা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমি রমেশ বিধুরীকে দিল্লি বিধানসভায় বিধায়ক হিসেবে দেখেছি। সে দিনগুলোতে সে ভালো ছিল। আমার ধারণা, সংসদে তার লালন-পালন মোদি-শাহই করেছেন। নতুন সংসদ; নতুন ভারত।”
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ সংসদের নিম্নকক্ষ থেকে বিধুরীকে সাসপেন্ড করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “দানিশ আলি সম্পর্কে রমেশ বিধুরী যা বলেছেন তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। যতই সমালোচনা করা হোক, তত কম। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ক্ষমা চেয়েছেন কিন্তু তা অপর্যাপ্ত। আমি এমন ভাষা কখনও শুনিনি। এই ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়। সংসদের ভিতরে বা বাইরে। এটা শুধু দানিশ আলীরই নয়, আমাদের সকলেরই অপমান…নতুন সংসদের সূচনা হয়েছে; বিধুরী ও তার কথায়, এতে বিজেপির উদ্দেশ্য বোঝা যাচ্ছে। বিধুরী যা বলছেন বিজেপির উদ্দেশ্য…আমি মনে করি এটা সাসপেনশনের উপযুক্ত মামলা এবং তার বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তি হওয়া উচিত।”
গতকাল কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী দানাশ আলির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তারপরেই, রাহুল সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দানিশ আলির সাথে সাক্ষাৎ এবং আলিঙ্গনের ছবি ট্যুইট করে লিখেছে, হিংসার বাজারে ভালোবাসার দোকান।
ডিএমকে নেতা টিকেএস এলানগাভন লোকসভায় বিএসপি-র কুনওয়ার দানিশ আলীর বিরুদ্ধে বিধুরীর মন্তব্যের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, একজন সংসদ সদস্যকে কীভাবে তিনি (রমেশ বিধুরি) ‘সন্ত্রাসী’ বলতে পারেন?