শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ এবং রেসলিং ফেডারেশনের সভাপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছিলেন ভারতীয় কুস্তিগিরেরা। এবার পাল্টা অভিযোগ করছেন অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহও। তাঁর দাবি, কুস্তিগিরেরা বার বার নিজেদের অভিযোগ বদলে ফেলছেন।
বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে ব্রিজভূষণ বলেন, “পুলিশ ব্যাপারটাকে বড় করে ফেলছে। যা হচ্ছে হোক, আমি সব সামলাতে তৈরি। আমাকে দয়া করে অযৌক্তিক প্রশ্ন করবেন না।” তিনি এমনকি, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রমানিত হলে আত্মহত্যা করবেন বলে ঠিক করেছেন। বলেছেন তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রমানিত হলে তিনি গলায় দড়ি দেবেন।
এর আগেও কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন ব্রিজভূষণ। এবার তাঁর দাবি, কুস্তিগিরেরা বার বার অভিযোগ বদলে ফেলছেন। রেসলিং ফেডারেশনের সভাপতি বলেন, “১৮ জানুয়ারি কুস্তিগিরেরা যখন যন্তর মন্তরের সামনে ধর্নায় বসলেন, তখন তাঁদের অভিযোগ ছিল এক রকম। কিছু দিন পর সেই দাবি পাল্টে গেল। আমি মহিলা কুস্তিগিরদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, আমি কোথায়, কখন তাঁদের সঙ্গে অন্যায় করেছি। কিন্তু কেউ আমাকে পরিষ্কার কোনও উত্তর দিতে পারেননি। কে কী বলছেন আমার বিরুদ্ধে, সেটা নিয়ে আমার কিছু যায়-আসে না।“
তিন মাস ধরে ধর্নায় অংশগ্রহণ করার আগেই রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি ব্রিজভুষণের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কুস্তিগিরেরা। দিল্লি পুলিশের কাছে এফাইআরও করেন তারা। দিল্লির কনৌট প্লেস পুলিশ স্টেশন থেকে দুইটি এফাইআর দায়ের করা হয়েছে। কুস্তিগিরদের অভিযোগের ভিত্তিতে আইপিসি ৩৫৪, ৩৫৪-এ, ৩৫৪-ডি এবং ৩৪ এর আওতায় মামলা দায়ের হয়েছে। তাছাড়াও পকসো আইনেও মামলা রজু করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এফাইয়ার-এ ব্রিজভুষণের সাথে বিনোদ তোমারেরও নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
নাবালিকা নির্যাতিতার তরফ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে তার বাবা। নির্যাতিতার বয়স বরতমানে ১৭ বছর এবং ২০১৬ সাল থেকে সে কুস্তি করছে। নির্যাতিতার বাবার বক্তব্য, একটি চ্যাম্পিয়নশিপে গোল্ড মেডেল জেতার পর ব্রিজভুষণ ছবি তলার অজুহাতে জোরপূর্বক নির্যাতিতাকে টেনে ধরে এবং এমনভাবে ধরে রাখে যে কিছুতেই সে নিজেকে ওই বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারছিল না। এরপরেই ব্রিজভুষণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বার বার নির্যাতিতার কাঁধের থেকে হাত নামিয়ে তাকে অশ্লিল্ভাবে স্পর্শ করতে থাকে। নির্যাতিতার বাবা আরও বলেন, এরপর ব্রিজভুষণ নির্যাতিতাকে বলেন “তুমি আমার পাশে থাকলে আমিও তোমার সাথে থাকবো, আমার সাথে যোগাযোগ রেখো।’’ এর উত্তরে নির্যাতিতা জবাব দেয়, “আমি নিজের উদ্যোগে এতদুর এসেছি, কঠোর পরিশ্রম করে আরও এগিয়ে যাবো।’’ যদিও এর পরেও ব্রিজভুষণ সিং তাকে ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকে যে, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রায়াল শিঘ্রই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। যেহেতু নাবালিকা তার সাথে সহযোগিতা করছেনা তাই তাকে ট্রায়ালের সময় সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
অন্য একজন নির্যাতিতা এফাইআর করার সময় উল্লেখ করেছেন যে “অভিযুক্তকে পুনরায় যৌন নির্যাতন করতে না দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আমি আপনাদের অনুরোধ করছি যে আপনারা মামলা দায়ের করুন এবং তাকে আটক করুন।’’ যদিও এতকিছুর পরেও সরকারের নিঃস্পৃহতা এবং আন্দোলনের ময়দানে পুলিশি অতিসক্রিয়তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে বলেই বিরোধীদের মত।