সেন্ট্রাল ভিস্তায় ‘অখণ্ড ভারত’ বিতর্কের পর কাঠমান্ডু মেট্রোপলিটন সিটির মেয়র বালেন্দ্র শাহ তার অফিসে “বৃহত্তর নেপাল” এর একটি মানচিত্র স্থাপন করেছেন। এই বৃহত্তর নেপাল মানচিত্র আপাতভাবে অখন্ড ভারতের মানচিত্রের বিরুদ্ধে একটা পাল্টা প্রতিবাদ।
অখন্ড ভারত নিয়ে কেন এই প্রতিবাদ?
বৃহত্তর নেপালের সমর্থকরা মনে করেন যে নেপালের ভূখণ্ড পূর্ব হিমালয়ের তিস্তা নদী থেকে পশ্চিমে সুতলজ নদী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। যাইহোক, ১৮১৬ সালে নেপাল সুগৌলি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরে উভয় অঞ্চলই এখন ভারতের অধীনে পড়ে। তারা এটাও বিশ্বাস করেন যে নেপালের ভূখণ্ড পূর্ব হিমালয়ের তিস্তা নদী থেকে পশ্চিমে শতলুজ নদী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতে ম্যুরালটি হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় শাসকদল বিজেপির সমর্থক শিবিরের বক্তব্য। সেই আবেগের উপর ভিত্তি করে এই ম্যুরালের ছবি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় সামাজিক মাধ্যমে। অখন্ড ভারতের ধারণা অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা ভারতের অংশ ইতিহাসে ছিল এবং ভবিষ্যতেও হবে।
গত সপ্তাহে, নেপালের রাজনৈতিক নেতারা এই ম্যুরালটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন কারণ ম্যাপটি অনুযায়ী লুম্বিনি (বুদ্ধ-র জন্মস্থান) এর অংশ৷ নেপাল তার মানচিত্রে লুম্বিনিকে অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে।
“আমরা ভারতীয় সংসদে স্থাপিত একটি নতুন ভারতীয় মানচিত্রের বিষয়টি উত্থাপন করেছি,” দাহাল বুধবার নেপালের জাতীয় পরিষদে বলেছেন, যদিও বিতরৃকের জেরে ভারত পক্ষ এই ম্যুরালকে একটি রাজনৈতিক ম্যাপ বলতে অস্বীকার করেছে। তারা এই দেওয়াল চিত্র কে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক চিত্র বলে বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছেন যে ম্যুরালটি মৌর্য সম্রাট অশোকের সাম্রাজ্য বিস্তার এবং “দায়িত্বশীল এবং জনমুখী শাসনের ধারণা”-কে চিত্রিত করে যা তিনি গ্রহণ করেছিলেন এবং প্রচার করেছিলেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি আরও যোগ করেছেন, “ম্যুরালের সামনের ম্যুরাল এবং ফলকটি তাই বলে”।
অখন্ড ভারত বিতর্ক নিয়ে কী বলছেন অন্যান্য বিদ্বজন?
যদিও ভারতের বিভিন্ন প্রগতিশীল মহলের বক্তব্য, ম্যুরালটি মৌর্য সাম্রাজ্যের চিত্র তুলে ধরলেও এ আসলেই হিন্দুত্ববাদের বহিঃপ্রকাশ। সেন্ট্রাল ভিস্তা উদ্বোধনের দিন, ব্রাহ্মণ পুরোহিত বা সাধু ডেকে তাদের পায়ে প্রধাণমন্ত্রীর ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম সেই ব্যাখ্যাই দেয়। উদ্বোধনের দিন অন্যান্য ধর্মগুরুদের আমন্ত্রণ করা হলেও শেষে হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শই প্রকট হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
তারা আরও মনে করেণ, এই ভাবে ধর্মাচরণের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রপতিভবন উদ্বোধন সেক্যুলার ইন্ডিয়ার উপর অদৃশ্য আঘাত। ধর্মনিরপেক্ষতা অনুযায়ী, রাষ্ট্র কোনও ধর্ম পালন করতে অপারগ। এবং সেক্ষেত্রে এই অখন্ড ভারত কাণ্ড আসলে হিন্দুত্ববাদেরই নামান্তর। একইসাথে ওই দিন বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ম্যুরাল নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে। সোমবার, ঢাকার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন যে তার সরকার দিল্লিতে তার মিশনকে এই বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চাইতে বলেছে।