এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার হাইকোর্টের রায়ে বাতিল হয়েছিল ২৫৭৫৩ জনের চাকরি। এবার এই রায়ে স্থগিতাদেশ জানালো ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। যদিও এই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে ১৬ই জুলাই। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্টি না হয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। এর আগে সুপ্রিম কোর্টে শুনানিতে রাজ্যের আবেদন মতো নির্বাচন চলাকালীন মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় আদালত।
যদিও এই দিন চাকরি বাতিল নিয়ে কোনও স্থগিতাদেশ জারি করা হয়নি। ফলে পুনরায় পথে নামেন চাকরিহারা শিক্ষকেরা। তারপরেই এসএসসি জানায় বাতিল হওয়া ২০১৬-র প্যানেলে যোগ্য অযোগ্য নির্ধারণ করা সম্ভব। সেই প্রসঙ্গেই আজকের নির্দেশ আদালতের। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে, মূল মামলাকারীদের আইনজীবী মনিন্দর সিংহ আদালতে সাওয়াল করেন, “ওএমআর শিট মেলানো সম্ভব নয়। প্রত্যেকের দুটো করে ওএমআর শিট হবে। একটি এসএসসির কাছ থেকে, অন্যটি নাইসার কাছ পাওয়া যাবে। এ বার কোনও ওএমআরে কারচুপি হয়েছে কী ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব? এর থেকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করাই ভাল।”
যদিও এই বিষয়ে আদালত জানায়, “পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা বিবেচনা করব। তার আগে আমরা কোনও শর্ত ছাড়া স্থগিতাদেশ দিতে আগ্রহী নয়।” এইদিনে এসএসসি মামলা নিয়ে দীর্ঘ শুনানি হয়েছে আদালতে। শুনানি চলাকালীন দুর্নীতির মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সাথে কথোপকথন চলে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের। প্রধান বিচারপতি ওএমআর শীট নিয়ে বিকাশরঞ্জনের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নাইসা নামক সংস্থা আজকে উঠে গিয়েছে। ওই সংস্থাকে মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সিবিআই সেখান থেকে যে ওএমআর উদ্ধার করেছিল এসএসসি তা গ্রহণ করে। ২৩ হাজার ১২৩ চাকরির সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। বেআইনি নিয়োগ হয়েছে ৮৩২৪ জনের।” এরপর প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন “তা হলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল চাইছেন কেন?” উত্তরে বিকাশরঞ্জন বলেন, “কারণ এটা একটা বিরাট দুর্নীতি হয়েছে। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই অবৈধ।”
শুনানির শেষের দিকে দশ মিনিট বিরতি নিয়ে নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। তার আগে আদালতের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, “আমরা সব পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। এর পরে বিস্তারিত শুনানিতে বাকিটা শোনা হবে।” এইদিন আদালত ২৫৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশে আপাতত স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম নির্দেশ দিয়েছে। কেন এখনই চাকরি বাতিল করা হবে না তার কারণ হিসাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, যদি যোগ্য এবং অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তা হলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না।
এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আপাতত কাউকে বেতন ফেরত দিতে হবে না। তবে এসএসসির ২০১৬ সালের প্যানেলে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের মুচলেকা দিতে হবে। পরে তাঁদের নিয়োগ ‘অবৈধ’ বলে প্রমাণিত হলে অযোগ্যদের টাকা ফেরত দিতে হবে। তদন্ত সম্পর্কে আদালতের নির্দেশ, আপাতত অবৈধ নিয়োগ নিয়ে তদন্ত চালাবে সিবিআই। তবে সুপারনিউমেরারি পদ তৈরি নিয়ে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে তদন্তে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ বজায় থাকবে। আগামী ১৬ই জুলাই চুড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে।