অবশেষে পৌষমেলা হচ্ছে শান্তি নিকেতনে। তবে এবার দায়িত্বে নেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ টানাপড়েনের শেষে তিন বছর পর পূর্বপল্লির মাঠে ফিরতে চলেছে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। এ বার পূর্বপল্লির মাঠে পৌষমেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিল জেলা প্রশাসন। যার প্রেক্ষিতেই নয় দফার নিয়ম মেনে করতে হবে মেলার আয়োজন। বিশ্বভারতীর অধিকাংশ শর্ত মেনে নেওয়ায় বৈঠকের পর সংশ্লিষ্ট মাঠে মেলা করার সম্মতি দিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই মর্মে অনুমতিপত্র জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দেবেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, বিগচ প্রায় তিন বছর পর শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার মাঠে মেলা করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই। তবে, গত সোমবারই কর্মসমিতির বৈঠকের পর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট জানিয়ে দেয় ইচ্ছা থাকলেও এ বছরও পৌষমেলার আয়োজন করা যাচ্ছে না। এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে সময়ের অভাব এবং অনলাইন সংক্রান্ত কাজের জটিলতাকে। তার আগে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে ছোট করে পৌষমেলার আয়োজন হবে বলে জানিয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সম্মতি ছিল না শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের। ট্রাস্টের দাবি, ছোট আকারে মেলা করা সম্ভব নয়। এই নিয়েই পৌষ মেলাকে ঘিরে জটিলতা শুরু হয়।
এদিকে পৌষমেলার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি, কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের লোকজন সহ স্থানীয়রা। ‘পৌষমেলা বাঁচাও কমিটি’ শীর্ষক হোর্ডিং নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে দেখাতেই গত মঙ্গলবার তাঁরা বিশ্বভারতীর প্রাঙ্গনে ঢুকে পড়েন। এর পরেই পৌষমেলা করার সিদ্ধান্ত নেন বীরভূম জেলা প্রশাসন। প্রশাসন পূর্বপল্লির মেলার মাঠ চেয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন। অন্য দিকে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে মেলা করতে হলে নয় দফার দাবি মানতে বলা হয়। সোমবার বীরভূম জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, নয় দফার মধ্যে আট দফা দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, জেলা প্রশাসনকে মেলা করার জন্য পূর্বপল্লির মেলার মাঠ ছেড়ে দেওয়া হবে।
বিশ্বভারতীর ইতিহাসে এই প্রথম বার পৌষমেলার আয়োজন করবে জেলা প্রশাসন। এমনকি এই প্রথম পূর্বপল্লির মাঠে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার দায়িত্বে থাকছেন না বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, তাঁরা পূর্বপল্লির মাঠে যে মেলার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অনুমতি প্রসঙ্গে লিখিত চিঠি জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হবে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। সময় অত্যন্ত কম থাকায় রীতিমতো যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে মেলার মাঠ সাজানোর জন্য নেমে পড়ছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই এই খবর সামনে আসতেই আনন্দিত বোলপুরবাসী।