Close

নিজের বিরুদ্ধেই ‘নিরানন্দ’ বিলে সই করবে কি রাজ্যপাল আনন্দ বোস

আনন্দ বোস জামানায় রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত চরমে উঠেছে। আনন্দ বোস বিরোধী বিল পাশ হবে কি বিধানসভায় বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে?

আনন্দ বোস জামানায় রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত চরমে উঠেছে। আনন্দ বোস বিরোধী বিল পাশ হবে কি বিধানসভায় বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে?

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে বিধানসভায় তৃণমূলের প্রস্তাব আনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার বিধানসভার বাদল অধিবেশনের শেষ দিন। ওই দিনই পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে আলোচনা হবে বলে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জানা গিয়েছে। সেই আলোচনায় অংশ নেবে তৃণমূল এবং বিজেপির পরিষদীয় দল। এখনও পর্যন্ত এই কর্মসূচিই তৈরি রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের রাজ্যপাল বোসবাবু যে ভাবে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন, তাতে তার বিরুদ্ধে প্রস্তাব আসতেই পারে বিধানসভায় বলে মনে করা হচ্ছে।

সমস্যার সূত্রপাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে। গত জুন-জুলাই মাসেও ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য নিয়োগ করলেও তা খারিজ করে দেয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিক্ষা দপ্তর‌। সাংবিধানিক ভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে রয়েইছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তাই শিক্ষা দফতরের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রেখে চলার কথা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসের পর রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে রাজ্যপালের কোনও কথা হয়নি। যদিও, সম্প্রতি দু’বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও পরিস্থিতি এখনও বেশ উত্তপ্ত।

সম্প্রতি রাজ্যপালের আচরণ নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতৃত্ব বিধানসভায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা যায় কি না, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। বিধানসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তৃণমূল পরিষদীয় দলকে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে গত জুলাই মাসে যখন বাদল অধিবেশন শুরু হয়েছিল, তখনই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনতে চেয়েছিল তৃণমূল পরিষদীয় দলের একাংশ। কিন্তু শেষমেশ শীর্ষ নেতৃত্বের সম্মতি না পাওয়ায় সেই বার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা যায়নি বিধানসভায়। কিন্তু বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা যেতেই পারে বলে মনে করছেন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একটা বড় অংশ।

ইতিমধ্যেই একই সঙ্গে ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য ঠিক করে দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস। কয়েক দিন আগে এর মধ্যে ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বতী উপাচার্য হিসাবে নিজেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। রাজভবন সূত্রের খবর, রবিবার রাতে ওই ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়-সহ কল্যাণী বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেলগাছিয়ার পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়েরও অন্তর্বর্তী উপাচার্য মনোনয়ন করেছেন তিনি। নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসাবে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীকে নিযুক্ত করেছেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের এমন পদক্ষেপে রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের দূরত্ব ক্রমশ বেড়েছে।

এছাড়াও, প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের আমলেই রাজ্যপালকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর বিল পাশ করেছিল রাজ্য সরকার। জগদীপ ধনখড় সেই বিলে স্বাক্ষর না করেই দেশের উপরাষ্ট্রপতি পদে বহাল হ’ন। অস্থায়ী রাজ্যপাল লা গণেশনও সেই বিলে স্বাক্ষর করেননি। এই বার সিভি আনন্দ বোসও সেই বিল-সহ হাওড়া পুরসভার একটি সংশোধনী বিলে স্বাক্ষর না করায় রাজ্য সরকারের ক্ষোভ বেড়েছে। চলতি বছরে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ৮৮ জন বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজভবনে নাম সুপারিশ করেছিল নবান্ন। কিন্তু তাতে কোনও মতেই সায় না দিয়ে উল্টে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং পুলিশের কারা বিভাগের ডিজিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল। এমনই টাগ অফ ওয়ারের জেরে শেষ পর্যন্ত বন্দিমুক্তিও হয়নি। একের পর এক সংঘাতের কারণেই এ বার বিধানসভাতে রাজ্যপাল বোসের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনতে পারে শাসকদল। আর এমন প্রস্তাব এলে কর্তব্য প্রসঙ্গে বিরোধী বিজেপি পরিষদীয় দল বলছে, সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে এই প্রস্তাব আনার কথা ঘোষণা করলে আমরা আমাদের অবস্থান সরাসরি জানিয়ে দেব।

Leave a comment
scroll to top