এইদিন CTC বা ট্রামওয়েজের জমি বা সম্পত্তি বিক্রির ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ট্রামের জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না। নির্দেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের। সরকারি কাজ বা সাধারণ মানুষের কাজে লাগবে না এটা নিশ্চিত হয়েই তবেই সরকারি জমি বিক্রি করা উচিত। মন্তব্য প্রধান বিচারপতির।
সূত্রের খবর, ট্রামওয়েজের জমি যখন বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করা হয়েছিল, তখন কেউ প্রতিবাদ করেননি? সেই প্রশ্নও তোলেন প্রধান বিচারপতি। বর্তমানে শহরে অবস্থিত ৬টি ট্রাম ডিপোর মধ্যে মাত্র ২টি কার্যকরী রয়েছে। বেলগাছিয়া ও টালিগঞ্জের ডিপো বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সেখানে নির্মাণকার্যও শুরু হয়েছে গিয়েছে। যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।
আদালতের মতে, কোনও কিছু ভেঙে দেওয়া, তুলে দেওয়া পথ হতে পারে না। সূত্র মারফত জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি টি এস সিভজ্ঞানম এবং বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চের তাই নির্দেশ, ট্রামকে বাঁচাতে একটি কমিটি গঠন করা হোক। সেখানে রাজ্যের প্রতিনিধি, সব মামলাকারী পক্ষ, প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও থাকবে। সবার মতামত নেওয়া যেতে পারে। কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দেবে।
এই বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই ট্রাম শুধু যানবাহন নয়, তা পর্যটনের ক্ষেত্রেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। ট্রাম বাঁচাতে জনগণের মতামত নেওয়া দরকার বলে মনে করে আদালত। এই শহরে থেকে পুরোপুরি ট্রাম বন্ধ হয়ে যাক, সেটা আদালত চায় না। এখন রাজ্যের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শহরে তিনটে রুট মিলিয়ে মাত্র ৩৪ কিলোমিটার ট্রাম চলাচল করে। আগে আর বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ২০টি রুট।
প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘এখন ৮ টি বাতানুকুল ট্রাম আছে। সেই সংখ্যাটা বাড়িয়ে ২০ করা যেতে পারে। ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে ট্রামের। ট্রামকে কেন্দ্র করে বিশেষ পরিষেবা চালু করা যেতে পারে। কলকাতার ট্রাম পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের বস্তু। এসব পদক্ষেপ করলে বাংলায় আরও পর্যটক আসবে।’ প্রধান বিচারপতির স্পষ্ট বক্তব্য, ‘পুরনো জিনিস বা হেরিটেজ রক্ষা করা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইঁট-কাঠ-লোহা দিয়ে ২০ তলা একটা বহুতল বানানো যেতেই পারে। কিন্তু তাতে লাভ কি?’
‘চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন, নব রূপে আগের রঙে শহরের বুকে ট্রাম চলছে! কেমন লাগবে! ময়দানের পাশ থেকে ট্রাম যায়, কেমন লাগে! পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হবে, রাজ্য যদি একটা পলিসি গ্রহণ করে। পুরানো ট্রামকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মাধ্যমে ব্যবহার করা যায় কিনা! দেখতে হবে। আমরা জানি কলকাতার মানুষের ট্রাম খুব প্রিয়। কলকাতার মানুষ খুব আনন্দিত যে দুর্গাপুজো হেরিটেজ তকমা পেয়েছে। যদি কলকাতার হেরিটেজ ট্রামকে যত্ন করা হয়, তাহলে কলকাতার মানুষ কত খুশি হবে!’ ট্রাম নিয়ে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায় এই ভাবনাই ব্যক্ত করলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস সিভজ্ঞানম।