শুক্রবার দুপুর দুটোয়, টানা পাঁচ দিন ধরে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের উপর শেখ হাসিনা সরকারে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করে বাম ছাত্র যুবরা। বিক্ষোভ থেকে আটক হন ৬১জন। প্রতিবাদীরা একাডেমির সামনে জমায়েত হয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দিকে এগুতে থাকলে রবীন্দ্রসদন মোড়েই মিছিল আটকায় পুলিশ। ধৃতদের লালবাজারে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও সন্ধ্যায় মুক্তি দেওয়া হয় বিক্ষোভকারীদের।
লালবাজার থেকে মুক্তি পাওয়ার সময় ছাত্র ছাত্রীরা “ইনকিলাব জিন্দাবাদ” “লড়েঙ্গে, জিতেঙ্গে” স্লোগান দেয়। ছাত্রদের মুক্তি পাওয়ার সময়ের একটি ভিডিও স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুকে প্রকাশ করেন বিক্ষোভের এক সংগঠক ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী। সেই ভিডিওটিকে শেয়ার করে বাংলা পক্ষের সুপ্রিমো গর্গ চট্টোপাধ্যায় লেখেন “ভারতে বাংলা ভাষার ভিত্তিতে তৈরী পশ্চিমবঙ্গ। সেই পশ্চিমবঙ্গে উর্দুতে স্লোগান দিচ্ছে বাঙালি কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। কারণ? তারা উর্দু সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষার ভিত্তিতে তৈরি বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা যদি পশ্চিমবঙ্গের এই উর্দু স্লোগানদাতাদের মানসিকতার হত, তাহলে আজ বাংলাদেশের জায়গায় পূর্ব পাকিস্তান থাকত। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে বাংলাদেশের নাগরিকরা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির একাংশের মাথায় যে হিন্দি-উর্দুর প্রেতাত্মা ভর করেছে, তার জন্য বাঙালি জাতীয়তাবাদী ঝাড়ফুঁক প্রয়োজন। সৌভাগ্যবশত, পশ্চিমবঙ্গের পাড়ায় পাড়ায় ওঝা তৈরি করছে বাংলা পক্ষ।
জয় বাংলা।”
এই প্রঙ্গে ইন্দ্রাণীর বক্তব্য “সংগঠকদের পক্ষথেকে ১৪টি স্লোগান নির্ধারিত করা হয়েছিলো, যার প্রত্যকটাই বাংলা। হিন্দি, উর্দু স্লোগানে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিলো৷ কিন্তু একটা স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে বিভিন্ন স্লোগান ওঠে, এটাই স্বাভাবিক।” ইন্দ্রাণীর পালটা প্রশ্ন “যারা আমাদের উর্দু নিয়ে প্রশ্ন করছেন, বাঙালিরা যখন খুন হচ্ছে, তখন তাদের কর্মসূচি কোথায়?”
মিছিলে অংশগ্রহণকারী আরেক ছাত্র ঋক ধর্মপালের বক্তব্য “বাংলাপক্ষ একটি ফ্যাসিবাদী সংগঠন, হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ, উর্দু সাম্রাজ্যবাদের নামে ওরা শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে বিভাজন করতে চায়। এখানে উর্দুর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, যে স্লোগান গুলো দেওয়া হয়েছে, তার ঐতিহ্য। আমরা ওভাবে ভেবে দেখিনি। কোনো ফ্যাসিবাদীই শুধুমাত্র ঐভাবে ভাবতে পারে।”
আরেক বিক্ষোভকারী শৌভিক দে বলেন “বাঙালির বাচ্চা যেমন খোঁচা খেলে ‘বাবাগো’ বলবে, ‘আউচ’ বলবে না, তেমনি পুলিশের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বামপন্থীদের মুখ থেকে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ই বেড়ুবে। বামপন্থীরা আন্তর্জাতিকবাদী ইনকিলাব জিন্দাবাদের কোনো দেশ হয় না।”
অন্যদিকে জবাবে গর্গ ইস্ট পোস্ট বাংলাকে বলেন “বাংলাপক্ষ ভারতের বাঙালিদের অধিকার রক্ষার জাতীয় সংগঠন। আমরা তিস্তার জল বাংলাদেশকে দেওয়ার বিরোধী। আমাদের কাছে গাজা যতটা দূরে, বাংলাদেশ ততটাই দূরের, অযোধ্যাও(উত্তর প্রদেশ) ততটাই দূরের।”
গর্গ আরও বলেন “ফ্যাসিবাদ এবং শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন প্রসঙ্গে বলবো, ফ্যাসিবাদী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় একচেটিয়া পুঁজির সমর্থন আমাদের নেই। কোথায় বাঙালির পুঁজি? তবে দ্বিতীয়টা অভিযোগটা সঠিক। আমরা শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন করতে চাই। আমরা চাই বাঙালিরাই বাঙলায় কাজ পাক, বহিরাগতরা নয়।”
শুক্রবার পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি তে মাথা ফেটেছে বাম ছাত্রসংগঠনের এক কর্মীর । তার বক্তব্য ,’মিছিল শুরু হওয়ার সাথে সাথে ব্যারিকেডের ওপার থেকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে আসে পুলিশ এবং লাঠি চার্জ শুরু করে দেয় সেই লাঠির আঘাতে মাথা ফেটে যায় তার’। জ্যোতির্ময় সেন নামে এক AISF কর্মীর থেকে জানা যায় ,’আটকের সময় তাকে রাস্তায় ফেলে তার বুকে পেটে লাথি মারে পুলিশ এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালি গালাজ করে’। মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দফায় দফায় প্রিজনভ্যানে আটক করে লালবাজারে নিয়ে আসা হয় তাদের এবং সন্ধ্যে ৬:৫৮ মিনিটে তাদের ছাড়া হয়। ছাড়া পাওয়ার পর তাদের একজন ইস্ট পোস্ট বাংলা কে জানায় ,আটকের পর তাদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং মিছিলে তোলা বিভিন্ন ফুটেজ সংক্রান্ত তথ্য ডিলিট করতে চাপ দেওয়া হয়’
অন্যদিকে দিল্লির যন্তর মন্তরেও বাম দল এসইউসিআই এর ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও বিক্ষোভ দেখিয়েছে এদিন। জানা গিয়েছে, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও, ২৪ জুলাই একগুচ্ছ বাম সংগঠন প্রতিবাদ-মিছিলের পরিকল্পনা করছে।