Close

মুঘল ইতিহাসে কাঁচি, কী বলছেন অধ্যাপকরা

দ্বাদশ শ্রেনীর পাঠ্যক্রম থেকে মুঘল ইতিহাস বাদ, NCERT-র যুক্তি, প্রতিযুক্তিতে কী বলছেন ইতিহাসের অধ্যাপকরা?

মুঘল সম্রাটেরা

ছবিস্বত্বঃ উইকিমিডিয়া কমনস

সম্প্রতি দি ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT) স্কুল পাঠ্যক্রম সংশোধন করেছে।দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের পাঠ্যক্রমে মুঘল ইতিহাস বাদ দেওয়া হয়েছে এর সঙ্গে একাধিক শ্রেনীর একাধিক পাঠ্যপুস্তকে বেশ কিছু পরিমার্জন করা হয়েছে।সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলি লাগু হবে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে।

বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র ট্যুইট করে এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে লিখেছেন যে, “চোর, পকেটমার এবং দু-পয়সার সড়কছাপ লোকেদের মুঘল সালতানাত ও ভারতবর্ষের সম্রাট বলা হত। আকবর, বাবর, শাহজাহান, আওরঙজেবের মত লাফাঙ্গাদের স্থান ইতিহাসের বইয়ে নে ডাস্টবিনে আছে।”

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সুস্নাত দাস বলছিলেন, “RSS এর কারা বলছে ঐতিহাসিকেরা বায়াসড? ওরা জানে না। ওরা মুর্খ। ঐতিহাসিকেরা ঐতিহাসিক, ইতিহাসে যা গবেষনা করে, যুক্তিসঙ্গতভাবে, বস্তুবাদি দৃষ্টিভঙ্গিতে, তথ্যনির্ভরভাবে, বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে যা পাওয়া গেছে তা পৃথিবীর সমস্ত ঐতিহাসিক, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, শিক্ষিত মহল যাঁদের মধ্যযুগের ইতিহাসবিদ রূপে মান্যতা দিয়েছেন, সম্মান দিয়েছেন, যেমন ইফতিদার আলম খান, মহম্মদ হাবিব, ইরফান হাবিব, সতীশচন্দ্র মজুমদার, রমেশচন্দ্র মজুমদার এবং আরো অনেকে, তাঁরা শতবর্ষাধীক ধরে ইতিহাস চর্চা করছেন। সেখানে ভারতবর্ষের ইতিহাস পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করে লিখেছেন। তার সবই সত্য, সবই বিজ্ঞানসম্মত, তথ্যনির্ভর। হঠাৎ এদের মাথায় ঢুকল যে এরা মুসলিমদের ইতিহাস মুঘলদের ইতিহাস মুছে ফেলবে”

সুরেন্দ্রনাথ কলেজ (মহিলা) -র ইতিহাসের অধ্যাপিকা ব্রততী হোড় ইস্ট পোস্ট বাংলাকে বলেন ভারতের সংস্কৃতির সংমিশ্রনের ইতিহাস, ভুমিপুত্র হিসেবে ধরতে গেলে দ্রাবিড়ীয় সভ্যতা একমাত্র, তারপর যারাই এসেছে তারা বহিরাগত, পারসিকরা আসছেন, গ্রিক শক হুণ আরবিয়রা মুঘলরা আসছেন, তাঁরা ভারতবর্ষে এসে তাঁরা ভারতীয় হয়েছেন, তাঁদের জন্ম এবং মৃত্যু এখানে। তাঁরা ব্রিটিশদের মত লুটপাট করে নিজের দেশে চলে জাননি। সেখানে এরকম একটা পদক্ষেপ অযৌক্তিক। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন ইতিহাসে মাঝে একটা যুগ বাদ দিলে ধারাবাহিকতার ধারনা শিক্ষার্থীরা কীভাবে পাবেন? প্রাচীন যুগের পর সরাসরি ব্রিটিশ যুগ শুরু হবে?

সমালোচকদের অভিযোগের আঙ্গুল ডানপন্থি হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের দিকে। সিপিআই(এম) এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি একে সাম্প্রদায়িক পুনর্লিখন বলে মন্তব্য করেছেন।

দি ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং(NCERT)-এর ডিরেক্টর দীনেশ প্রসাদ সাকলানি যদিও সমস্ত বিতর্ক উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, যে এটা পাঠ্যক্রম যৌক্তিকরনের প্রকৃয়া যা মূলত অতিমারিতে শিক্ষার্থীদের পঠন পাঠনের বোঝা কমানোর জন্য ভাবা হচ্ছিল।CBSE -র পাঠ্যক্রম থেকে মুঘল ইতিহাস বাদ দেওয়ার খবর কে মিথ্যে বলে অভিহিত করে জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের একটি দল ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত পাঠ্য বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখেছেন কোনগুলো বাদ দিয়েও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাতে খামতি না হয়। তিনি এও জানিয়েছেন যে সপ্তম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা এর পরও মুঘলদের ইতিহাস পড়বেন, শুধু কিছু অধ্যায় বাদ গেছে।

দাস আমাদের প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, “রাজনৈতিক কারণে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করার জন্য এখন শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যবহার করতে চাইছে।এর তো কোনো প্রয়োজন ছিল না। সিলেবাসে অনেক কিছুই থাকে। সমস্ত কিছুই ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত। ঘোরী, বাবর হূমায়ুন শাজাহান সমস্তই ইতিহাসের অংশ, তাদের কোনোটা সংস্কৃ্তির ইতিহাস কোনোটা কৃষি, কোনোটা বিজ্ঞান, কোনোটা শিল্পের, প্রশাসনের, বিজ্ঞানের। শিক্ষার্থীদের অসুবিধে হলে কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে সেটুকু পড়ানো হবে না।কিন্তু তার জন্য সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়ার কোন মানে থাকতে পারেনা।”

লেখক

Leave a comment
scroll to top