ভারতবর্ষে আম্বানির ছোট ছেলের বিয়ে হচ্ছে শুনলাম। এলাহি আয়োজন নাকি! তাও এখন শুধু বিয়ের আগের উৎসব নিয়ে সমস্ত সমারোহ এখন। তাদের নাকি আড়াই হাজার পদের খাদ্যতালিকা প্রস্তুত হয়েছে! এতো এতো অতিথিদের নেমন্তন্ন করা হয়েছে জানা নেই কত শয়ে শয়ে, নাকি হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে। এইবার আমরা ভাবতেই পারি যে এত এত খাবার তো নিশ্চয়ই নষ্ট হবে। আলবাৎ, এরকমই হয়। আমি নিজে এতবার নিজের চোখে দেখেছি যে এখন আর অবাকও লাগেনা। আমি নিজে যেহেতু এই লাইনে কাজ করছি এত বছর তাই এইরকম অনেক অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে, সেই বিষয় এই পবিত্র রমজান মাসের সময়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। সেইটাই আজ বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে বলছি।
আম্বানিদের ব্যয়বহুলতা এবং তাদের দেশের মানুষকে নিংড়ে নেওয়া নিয়ে না হয় আজ আর বললাম না। আজ আপাতত বলি এইসব অতি ধনী পুঁজিবাদীদের নষ্টের জীবন নিয়ে। আমি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এক বিশাল বিজনেস সামিটেও কাজ করতে গেছিলাম মহামারীর আগে। ওনার কেবিনেই আমার ডিউটি পড়েছিল সেইবার। তখন আমার চোখের সামনে বস্তা বস্তা খাবার ফেলা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর দেহরক্ষীরা খেতে এসেছিলেন আমাদের কাছে তারা পর্যন্ত কাতরভাবে আবেদন করছিলেন যাতে বাইরে গ্রামের অত গরীব মানুষ যারা দাঁড়িয়ে আছেন তাদের দিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু আমাদের স্টাফ ম্যানেজারদের ভয়ে নিয়ম লঙ্ঘন করতে পারেননি। আমি দেখলাম, গ্রামের মানুষরা সেই সামিটের বাইরে থেকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন। তাদের নজরের সামনেই এক ট্রাক ভরতি করা হলো তিনদিনের বস্তা বোঝাই ফেলে দেওয়া খাবার। আমার আজও মনে হয়, সেদিন যদি সেই দেহরক্ষীদের আমি নিজেই অনুরোধ করতাম যাতে তারা তাদের ওই প্রস্তাবটা সোজা মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে বলায়। নাহলে আমি নিজেই যদি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ছুটে গিয়ে অনুরোধ করতাম…. কারন আইটিসির মতো অত বড়ো হোটেলের ওই নিয়ম বেঁকিয়ে খাবার নষ্ট হওয়ার থেকে আটকানোর ক্ষমতা তখন শুধুমাত্র রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরই ছিল আমার মনে হয়!
তা এইসব নিয়ে এখন বলছি কারন এই বিষয় নিয়ে নতুন কিছু খবর হয়েছে। সৌদি আরবের মানুষ খাবার নষ্ট করা চরম হারাম মনে করেন। একবার একটা রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময়ে এক সৌদি ব্যাক্তি তার পাতের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই শেষ করতে পারেননি, তাই হঠাৎ একরকম জোর করেই আমার হাতে ধরিয়ে উঠে গেলেন যাতে আমি সেটা খেয়ে সেটা নষ্ট না হতে দি। কেন? তুমিই বা বেশি নিয়েছো কেন? এরা এত এই বিষয়টি নিয়ে খুঁতখুঁতে, তবুও ওরাই সবচেয়ে বেশি নষ্ট করে যা দেখা যায়। রমজানের ইফতার পার্টিগুলোতে দেদার এমন অপচয় হয় দেখা যায়।
এই বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবেদন রেখেছেন যেন সরকারি দফতরের ইফতার পার্টিগুলো সীমিতভাবে করা হয় যাতে খাবার নষ্ট না হয়। সৌদি আরবে তো এই বছর থেকে মসজিদের ভেতরে ইফতারের খাওয়াদাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে নষ্ট এবং নোংরা হওয়ার কথা ভেবে। কিন্তু এত কিছুর পরেও, কেউ রমজানে সরকারি ভাবে হয়তো খাবার অপচয় আটকানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু এই ধরনের অতিব বিলাসবহুল বিবাহ এবং এই ধরনের উপলক্ষ গুলির হত থেকে এত টন টন খাবার কে বাঁচাবে?