আবার বিতর্ক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবার দর্শন বিভাগের স্টাডি মেটিরিয়াল নিয়ে উঠলো বিতর্ক। বিতর্কের সূত্রপাত এক ছাত্রীর সামাজিক মাধ্যমের পোস্টকে কেন্দ্র করে। ছাত্রী জানান দর্শন বিভাগের স্নাতক প্রথম সেমেস্টারের স্টাডি মেটিরিয়ালে নাকি লেখা হয়েছে, “বেদেই সব আছে এবং বিজ্ঞানকে বৈদিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিৎ।”
যাদবপুরের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী অনুজ্ঞা রায় আজ সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন, “সবাই জানে যাদবপুর খুব প্রগতিশীল ক্যাম্পাস, কিন্তু আজ সকালে পরীক্ষার জন্য পড়তে গিয়ে চমকে গেলাম। আমাদের বিভাগ থেকে যে স্টাডি মেটিরিয়াল দেওয়া হয়েছিলো, তাতে লেখা, বেদের মধ্যেই আছে বিজ্ঞানের সমস্ত কিছু! এ ছাড়াও গোটা স্টাডিমেটিরিয়াল জুড়ে অসংখ্য উদ্ভট হিন্দুত্ববাদী প্রপাগান্ডায় ছড়াছড়ি।”
ইস্টপোস্ট বাংলার সাথে কথা বলার সময় অনুজ্ঞা জানিয়েছে, “এনভায়রনমেন্ট ফিলোজফির কিছু হ্যান্ড আউট মেটিরিয়াল আমায় দেওয়া হয়েছিল। আজ আমাদের পরীক্ষা ছিল তাই তার আগে মেটিরিয়ালটা পড়তে গিয়ে আমি দেখি সেখানে বিভিন্ন জায়গায় লেখা আছে বেদের দৃষ্টিকোণ থেখে বিজ্ঞানকে দেখা উচিৎ এবং বিজ্ঞানীরা কিভাবে বেদের প্রমাণ স্বীকার করে ইত্যাদি। এবং আরও বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কথা বলা ছিল যেটা পুরোপুরি ওপিনিয়নেটেড। মানে কিছু তথ্য আছে কিন্তু তার সাথে এই কথাগুলো না বললেও কিছু যায় আসতো না।”
অনুজ্ঞা তার সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে বিজ্ঞানীদের সূত্র ধরে বলেছেন, “বহু আগে বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ বিজ্ঞানের সাথে বেদকে মেলানোর এই হাস্যকর চক্রান্তের বিরোধিতা করে গেছেন। মেঘনাদ সাহার ব্যাঙ্গাত্মক রচনা “সবই ব্যাদে আছে”র কথা আমরা অনেকেই জানি।”
এই প্রসঙ্গে এই পেপারের অধ্যাপক গার্গী গোস্বামীর সাথে যোগাযোগ করা হলে এবং তার মতামত জানতে চাওয়া হল, তিনি সংবাদসংস্থার তরফ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে শুনেই ফোন কেটে দেন। একইভাবে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মধুছন্দা সেনের সাথে ইস্টপোস্ট বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনিও মুখের উপর ফোন কেটে দেন। পরে ফোন করলেও তিনি আর জবাব দেননি।
এই প্রসঙ্গে অনুজ্ঞা আরও লিখেছেন, “বেদ একটি প্রাচীন দলিল, বেদ গুরুত্বপূর্ণ সেই সময়টাকে বোঝার জন্য। বেদেই বিজ্ঞান, আধুনিক সব কিছু বেদে ছিলো, এই সব প্রচার একটি হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের হাস্যকর আবদার। আজ কাদের চক্রান্তে এই সমস্ত ননসেন্স সিলেবাসে ঢোকানো হচ্ছে, তা বোঝানো দরকার। আজ বেদে বিজ্ঞান পড়ানো হচ্ছে কাল জ্যোতিষ পড়ানো হবে, পরশু গরুর চোনাতে সোনা খুজতে গবেষণা করাবে। ইতিমধ্যে ডারউইন এর বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ নেমে এসেছে। আক্রমণ নেমে এসেছে শিক্ষার সমস্ত ক্ষেত্রে।…এটা শুধু রাজনৈতিক বিষয় নয় একাডেমিক বিষয়ও বটে। এটার সাথে দেশের একাডেমিয়ার মান সম্মানও জড়িত। গেরুয়া ফ্যাসিস্টদের দেশের একাডেমিয়া নিয়ে আমরা খিল্লি ওড়াতে দিতে পারি না।”
অনুজ্ঞার পোস্ট নিয়ে সমাজ মাধ্যমে হুল্লোড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রচুর নেটিজেনদের এর পক্ষে বিপক্ষে মতামত জানাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, অনুজ্ঞা রায় বাম ছাত্র সংগঠন নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের (এআইএসএফ) যাদবপুর ইউনিটের সদস্যা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এআইএসএফ ইউনিট এই প্রসঙ্গে বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস রুমে প্রবেশ করেছে হিন্দুত্বফ্যাসিবাদের প্রপাগাণ্ডা। এআইএসএফ-এর সদস্যা, দর্শন বিভাগের ছাত্রী অনুজ্ঞা রায় আজ এই খেয়াল করে, দর্শন বিভাগে যে স্টাডি মেটিরিয়াল দেওয়া হয়, সেখানে আধুনিক বিজ্ঞানের সমস্তকিছুই বেদে আছে এমন বলা হয়েছে। এ ছাড়াও আমরা দেখেছি স্টাডি মেটিরিয়ালের ছত্রে ছত্রে অ-বৈজ্ঞানিক অসত্য হিন্দুত্ববাদী প্রপাগাণ্ডা ছড়ানো হয়েছে।”
এআইএসএফ আরও জানিয়েছে, “…একদিকে শিক্ষার বেসরকারীকরণ, গবেষণায় ফান্ড সংকোচন, অন্যদিকে ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শন সব কিছু নিয়ে ছেলে খেলা করে হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদীরা অবৈজ্ঞানিক, কুসংস্কারী মন গঠন করতে চাইছে। প্রগতিশীল মুক্ত চিন্তা এবং প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আগামী দিনে হয়তো বিদ্বেষী দাঙ্গাবাজ তৈরির কারখানায় পরিণত করার প্রচেষ্টা হবে।…আমাদের দাবি সিলেবাস থেকে অবিলম্বে সমস্তরকম অবৈজ্ঞানিক ধর্মীয় প্রপাগাণ্ডা বাদ দিতে হবে।”