রায়বাবুর সিনেমায় হীরক রাজা বলেছিলেন, “ওরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে।” এবিষয়ে ইদানিং হীরক রানীর ভয় বাণীও ভাববার মতো বিষয় বটে। নাহলে পড়াশোনার আঁতুড়ঘরে হিতার্থে উপদেশ আটকাতে তাঁর সৈন্য সামন্ত তৎপর হবে কেন?
কথা হচ্ছে বইমেলায় প্রতিবাদ কর্মসূচি ও তৎপরবর্তী পুলিশী অতিসক্রিয়তা নিয়ে। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা মুক্ত চিন্তার আখড়া। বিভিন্ন সবেধন নীলমণি প্রকাশকের সাথেই যেমন মেজো, সেজো ও ছোট প্রকাশকেরা এখানে নতুন প্রকাশনার পসার সাজিয়ে আসে, তেমনই আসে একঝাঁক নতুনের ভিড়; একঝাঁক উদ্ধত আঠারো। কবি সুকান্তও বলেছেন- “এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য/ বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে, / প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য / সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে”। এই আঠারো থেকে পঁচিশ, দেশ-বিদেশের সমাজচিন্তায় যাদের রক্ত ফুটছে। তারা আসে তাদের মনন-চিন্তন ছড়িয়ে দিতে। কিন্তু বিরুদ্ধতার কন্ঠস্বর রোধে সদা জাগ্রত হীরক রানীর সেনার দয়ায় এ মুক্ত স্রোত বাধা পড়ছে বারবার। গত পরশু শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী ছাত্রদের আটক এবং গতকাল পাল্টা প্রতিবাদে পুলিশী অতিসক্রিয়তা তারই প্রমাণ। মজা নদীতে যেমন ডিঙা ভাসানো যায়না তেমনই রুদ্ধস্বরের গড্ডালিকা প্রবাহ বইমেলায় স্রেফ গা ভাসানোর অর্থহীন। এমনিতেই পুলিশি চোখ রাঙানিতে বাস্কিং, মুক্তকন্ঠে কবিতাপাঠ, ফুটপাতে আর্টিফ্যাক্ট, ওপেন এক্সিবিশন প্রায় বন্ধ; হলেও হাজার দফা ফরমান আনার বন্দোবস্ত করতে হয়। কিন্তু পুলিশ তো নিমিত্ত মাত্র, কর্ত্রীর ইচ্ছায় কর্ম। সেই কর্ত্রী, হীরক রানীও কি তবে বলছে, “ওরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে”?