Close

প্রাক-ফ্যাসিবাদপর্বের ভারত, অনির্বান বসুর গল্পসংকলন “যারা কয়েদখানায় ঢুকে যায়” প্রসঙ্গে বললেন আলোচকেরা

অনির্বান বসুর গল্পসংকলন ‘যারা কয়েদখানায় ঢুকে যায়’ বইটি নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হল মান্দাসের গ্রন্থবিপণিতে।

২০ মে, অনির্বান বসুর গল্পসংকলন ‘যারা কয়েদখানায় ঢুকে যায়’ বইটি নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হল মান্দাসের গ্রন্থবিপণিতে। আলোচনায় অংশ নিলেন এই সময়ের দুই চিন্তক গণশক্তি পত্রিকার সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তী এবং নাট্য অভিনেতা ও নির্দেশক জয়রাজ ভট্টাচার্য।

জয়রাজ এবং দেবাশিস, দুজনেই এই ভারতবর্ষকে চিহ্নিত করেছেন প্রাক-ফ্যাসিবাদ পর্বের ভারত হিসেবে, যখন চেনা স্বদেশের বিনির্মান হচ্ছে, বিশদে বদলাচ্ছে আশপাশ, এই প্রেক্ষিতে অনির্বান পদাতিক সৈন্যের মত মুখোমুখি সংঘর্ষে দাঁড়াচ্ছেন, তিনি অনিশ্চয়তায় ঝাঁপ দিতে রাজি, স্থিতাবস্থার পক্ষে থাকা সমস্ত কিছুকে অস্বীকার করছেন। গল্পকারের সাথে বাহবা প্রাপ্য প্রকাশকের।

পাঠপ্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে দেবাশিস বলেন, “এই বইয়ের অধিকাংশ গল্পের প্রেক্ষিত আমারই চারপাশ। ফলে চরিত্ররা কেবল মগজে থাকে না, বলা যেতে পারে যে শরীরের ওপরে উঠে আসে। আমাদের ত্বকের তলায় এক তৃণবর্ন দেশ শুয়ে আছে, সেই দেশ কি আর তৃণবর্ন থাকছে? ক্ষরাধ্বস্ত এক ধুসর মাঠের মধ্যে দিয়ে, আমাদের মধ্যবিত্ত বাবুই বাসার গলিপথ দিয়ে কোন একটা অগ্নিশলাকা ছুটে আসে। অনির্বানের গল্পগুলো সমকালের গল্প।”

জয়রাজ মন্তব্য করেন, “প্রত্যেকটা কন্টেম্পোরারি আসলে কিছুটা স্মৃতি, কিছুটা অতীত আর কিছুটা ভবিষ্যতের সমন্বয়। সেই কারণেই সে কন্টেম্পোরারি। অতীতের শিক্ষা থাকে আর ভবিষ্যতের ইচ্ছে থাকে। স্মৃতির কিছু এক্সাইট্মেন্ট থাকে, স্মৃতির কিছু করুণা থাকে, স্মৃতির কিছু দাবি থাকে, স্মৃতির কিছু পরাজয় থাকে। বর্তমানকে বাদ করলে স্মৃতি কখনো স্মৃতি থাকে না। বর্তমানে দাঁড়িয়ে আমি যখন স্মৃতির কথা বলি, তখন সে সর্বোত ভাবে একটা ভবিষ্যতের নির্মানপ্রয়াসী। তা ছাড়া স্মৃতির কোন অভিঘাত নেই। আমি যখন অনির্বানের লেখা পড়ছি, তখন দেখতে পাচ্ছি তার লেখা টাইমকে চ্যালেঞ্জ করছে। লেখা বর্তমানে থাকতে থাকতে অতীতচারি হয়ে যাচ্ছে। স্মৃতিতে যাচ্ছে। আবার লেখা এই বর্তমানকে অতিক্রম করে যেতে চাইছে।”

“অনির্বান আজকের ভারতের কথা শুনিয়েছে, কখনো সোজা, কখনো পোস্টারের মত, কখনো একটু কল্পনার মিশেল ঘটিয়ে। কখনো গদ্য খুব চঞ্চল, অস্থির, অশান্ত। কখনো ভূমির মত ভারি,” দেবাশিস বলেন।

উভয় বক্তাই গত শতকের তিরিশের দশকের আশেপাশের লেখালেখির প্রসঙ্গ টেনে এনে ফ্যাসিবাদের আগমনের ইঙ্গিতগুলোকে যুক্তির ভিত্তিতে দাঁড় করান। জয়রাজ ঝুঁকি নিয়ে ব্যাখ্যা করেন কীভাবে মূলত আনন্দবাজারকে কেন্দ্র করে একদল লিবারাল তকমাধারি বুদ্ধিজীবী নিজেদের ‘সিভিল সোসাইটি’ বলে প্রতিপন্ন করছেন। একে ‘সুচারু বদমায়েশি’ আখ্যা দিয়ে জয়রাজ বলেন, এসব ধারণা যিনি প্রথম চিহ্নিত করেছিলেন সেই আন্তোনিও গ্রামশির নাম ব্যবহার করে এই বদমায়েশি ঘটছে। গ্রামশির প্রকল্পে পলিটিক্যাল সোসাইটিতে ছিল চার্চ, আদালত ইত্যাদি অর্থাৎ রাষ্ট্রতন্ত্র অন্যদিকে সিভিল সোসাইটি বলতে ছিল মূলত কমিউনিস্ট পার্টি। ফ্যাসিবাদ আসন্ন হলে একদল বুদ্ধিজীবী এভাবে উদারীকরণের নামে ‘জলঘোলা’ করে থাকেন।

Leave a comment
scroll to top