Close

বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু।

বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা

বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচন হবে কিনা সেই নিয়ে ভীষণ নাকি উদ্বিগ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র সেই সব বাংলাদেশী নাগরিকের ভিসা আবেদন বাতিল করবে যাঁদের নামে সেই দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বানচাল করার অভিযোগ থাকবে। ব্লিঙ্কেনের বক্তব্য ঘিরে বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। 

বুধবার, ২৪শে মে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপত্র ম্যাথু মিলার ব্লিঙ্কেন দ্বারা পরিকল্পিত বাংলাদেশের জন্যে নয়া ভিসা নীতি সংক্রান্ত বক্তব্য কে সরকারি ভাবে ঘোষণা করেছেন। এই ঘোষণার উদ্দেশ্য কে নিয়ে বাংলাদেশের নানা মহল থেকে নানা রকম ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। যদিও এর মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার, ২৫শে মে, বাংলাদেশ-স্থিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সে দেশের শাসকদল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পার্টি (বিএনপি), ও জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রতিনিধিদের একটি বৈঠকে ডেকে জানান যে ওয়াশিংটন ডিসি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দাবি করে। তাঁর সাথে দুই ঘন্টার উপর বৈঠকের পরে দৃশ্যত উৎফুল দেখিয়েছে বিএনপি ও জেপি নেতাদের। 

পশ্চিমা-ঘেঁষা বিএনপি বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করার এই ঘোষণা কে সমর্থন করেছে। দলের পররাষ্ট্র কমিটির সভাপতি আমির খসরু সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই কারণ এটি [আগামী সাধারণ] নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের উদ্বেগের কথা বিবেচনা করে করা হয়েছে। আমি মনে করি এই পদক্ষেপটি অন্তত আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে আয়োজনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।”

বিএনপি নেতা খসরু আরও বলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে একমাত্র আওয়ামী লীগের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ আছে। তিনি দাবি করেন যে আওয়ামী লীগের মতন বিএনপি নির্বাচনে রিগিং করে না বা ভোট লুন্ঠন করে না। এ ছাড়াও খসরু বলেন যে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সন্ত্রাসের কারণেই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রক এমন নীতি গ্রহণ করেছে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষেত্রে গ্রহণ করা হয়নি। 

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র কে চটাতে না চেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার এই ঘোষণার সরাসরি বিরোধিতা করেনি, বা এই ভাবে পশ্চিমা শক্তির পূর্বের একটি দেশে, যে দেশের মুক্তিযুদ্ধের তারা বিরোধিতা করেছিল, হস্তক্ষেপ করার এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তোলেনি। বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে সরকারি ভাবে নতুন কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। 

“মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট-এর আওতায় তথাকথিত 3C বিধান অনুসারে মার্কিন সরকারের ভিসা নীতি সংক্রান্ত ঘোষণাটির প্রতি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণাটিকে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সকল পর্যায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের দ্ব্যর্থহীন প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করছে। তবে, বাংলাদেশ আশা করে যে এই ভিসা নীতি যথেচ্ছভাবে প্রয়োগের পরিবর্তে বস্তুনিষ্ঠতার সাথে অনুসরণ করা হবে”, বলে বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি মধ্যপন্থী বিবৃতি জারি করেছে

বেশ কিছু বছর ধরেই, বিশেষ করে ২০১৮ সালে ভারী জনমত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-র নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই, বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধীরা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছে। অনেকে প্রতিবেশী ভারতের পরোক্ষ মদদে হাসিনা জিতেছেন বলেও অভিযোগ করে। এবং হাসিনা সরকারের শাসনকালে পশ্চিমা-বান্ধব নানা ধরণের নীতি নেওয়ার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার, বিশেষ করে জো বাইডেন-নেতৃত্বাধীন দক্ষিণপন্থী ও হস্তক্ষেপপন্থী ডেমোক্র্যাট সরকার, ঢাকা কে নানা ভাবে সমালোচনা করে এসেছে। 

যদিও ঢাকা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার উষ্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখতে এই বিষয়ে নিয়ে বেশি উচ্চবাচ্য করেনি, কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে হাসিনা ধীরে ধীরে পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া শুরু করেছেন কারণ তাঁর সরকার এখন পদে পদে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছে। হাসিনা ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারের কথায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন চীন-বিরোধী “ইন্ডো-প্যাসিফিক” জোটের সমর্থক হলেও, যুক্তরাষ্ট্র তাকে সামরিক জোট কোয়াড ও অন্যান্য আঁতাতে যোগ দিতে চাপ দিচ্ছে। এর মধ্যে চীনের সাথে উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি হতে থাকা বাংলাদেশের পক্ষে খোলাখুলি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো চীন-বিরোধী জোটে সামিল হওয়া সম্ভব নয়। আর চীনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে ভারত বা যুক্তরাষ্ট্র কেউই খুশি নয়।

এমতাবস্থায় চাপে পড়ে, ও বারবার তার সরকারের মানবধিকার হরণ, সন্ত্রাস সৃষ্টি ও রাজনৈতিক ভাবে একনায়কতন্ত্র কায়েম করার ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটের সমালোচনা ও নিষেধাজ্ঞার—সম্প্রতি বাংলাদেশের আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের উপর ক্রসফায়ার করে নিরীহ মানুষ হত্যার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে পশ্চিমা শক্তি—চাপে হাসিনা কে পশ্চিমা-বিরোধী অবস্থান নিতে হয়েছে। এর সাথে ঢাকা ও বেইজিং এর মধ্যেকার সম্পর্ক উন্নতিও জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক উন্নতির কারণে বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বাড়ছে বলেও মনে করা হচ্ছে। 

সম্প্রতি, ১০ই এপ্রিল, জাতীয় সংসদে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আনা ১৪৭ বিধির সাধারণ প্রস্তাব ও অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো দেশের সরকার কে উল্টে ফেলতে পারে বলে অভিযোগ করে বলেন, “গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে এখানে এমন একটা সরকার আনতে চাইছে– তার গণতান্ত্রিক কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। অগণতান্ত্রিক ধারা। আর সেই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী, সামান্য কিছু পয়সার লোভে এদের করে। পদলেহন করে।”

বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে শোরগোল শুরুর দিকেই ওয়াশিংটন ডিসি পূর্বে যে সামরিক স্বৈরতন্ত্র কে সমর্থন করতো এবং মুক্তিযুদ্ধ আটকাতে সপ্তম নৌবহর পাঠাতে চেয়েছিল সেই সব উল্লেখ করার সাথে সাথে ওয়াশিংটন ডিসি যে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণহত্যাকারীদের আশ্রয় দিয়েছে ও ‘বঙ্গবন্ধু’ বলে খ্যাত শেখ মুজিবর রহমানের খুনিদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে সেই সব তথ্য উল্লেখ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র নিয়ে দ্বিচারিতার বিরোধিতা করেন। 

“১৫ আগস্টে যারা হত্যা (মুজিব কে) করেছে, সেই খুনি রাশেদ (রাশেদ চৌধুরী) আমেরিকায় আশ্রয় নিয়ে আছে। সেখানে যতটা প্রেসিডেন্ট এসেছে, সবার কাছে আমি আবেদন করেছি। আইনগতভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমরা ডিপলোমেসির (কূটনৈতিক) মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়েছি। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি যে, এই খুনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাকে আপনারা আশ্রয় দেবেন না। শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, রাষ্ট্রপতির হত্যাকারী, মন্ত্রীর হত্যাকারী। এটা মানবতা লঙ্ঘনকারী। এদেরকে আপনারা আশ্রয় দিয়েন না। ফেরত দেন। কই তারা তো তাকে ফেরত দিচ্ছে না। খুনিদের লালন-পালন করেই রেখে দিচ্ছে”, বলেন হাসিনা। 

হাসিনা বলেছিলেন, “আজকেও আমি বলি, যে দেশটা আমাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের ছবক দেয়। আর আমাদের বিরোধী দল থেকে শুরু করে কিছু কিছু লোক তাদের কথায় খুব নাচন-কোদন করছেন, উঠবস করছেন, উৎফুল্ল হচ্ছেন। হ্যাঁ, তারা যেকোনও দেশের ক্ষমতা ওল্টাতে পারেন, পাল্টাতে পারেন। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো তো আরও বেশি কঠিন অবস্থার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। আরব স্প্রিং (আরব বসন্ত), ডেমোক্রেসি সব বলে বলে যেসব ঘটনা ঘটাতে ঘটাতে– এখন নিজেরা নিজেদের মধ্যে একটা প্যাঁচে পড়ে গেছে। যতদিন ইসলামিক কান্ট্রিগুলোর ওপর চলছিল, ততদিন কিছু হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে এখন সারা বিশ্বই আজকে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে গেছে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।”

এর পরেই মার্কিন-বিরোধী চীন-রাশিয়া জোটের সাথে আরও ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো শুরু করেন হাসিনা, যদিও তাঁর সরকার জানায় যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। যদিও তখন বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে আলোড়ন চলছিল। এরই মধ্যে এপ্রিল মাসেই যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী ইরানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কে মজবুত করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। 

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ ইরানের পক্ষে ভোট দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের চোখ রাঙানি কে উপেক্ষা করে। এর পরে, ১৭ই এপ্রিল, হাসিনা ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসির সাথে টেলিফোনে আলাপ করেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান নিয়েও বাংলাদেশ পশ্চিমা জোটের পক্ষে না গিয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। এর মধ্যেই চীনের বিশেষ দূত দেং শিজুন ঢাকা সফর করে গেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ মোমেন চীন সফর করেছেন।

অন্যদিকে ভারসাম্য রাখতে হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র-ঘনিষ্ঠ জাপান সফর করেছেন ও মধ্য প্রাচ্যেও গেছেন, যেখানে এখন চীনরাশিয়া নিজের প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে আরব দেশগুলোকে মার্কিন খপ্পরে থেকে বের করতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে যেন কোনো ভাবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিক্রি করা না হয় সেই নিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কারণ সেই সময়ে চীন-বিরোধী একটি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-জাপান আঁতাতের বৈঠকও চলছিল। 

“শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জাপানের সঙ্গে যে ত্রিদেশীয় সমঝোতার কথা শোনা যাচ্ছে সেটিও বেশ উদ্বেগজনক। বিশেষ করে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এশিয়াভিত্তিক সামরিক অভিলাষ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইন্দো প্যাসিফিক কৌশলগত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চট্টগ্রামের মাতারবাড়িতে জাপান যে গভীর সমুদ্র বন্দরটি তৈরি করেছিল তাকে চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করা এবং এর সহায়ক হিসেবে মার্কিনের দীর্ঘদিনের ইচ্ছানুযায়ী বাংলাদেশে একটি মার্কিন নৌ ঘাঁটি স্থাপন ইত্যাদি জাপান সফরকালে আলোচিত হবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে, তা হবে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য বিরাট হুমকিস্বরূপ। এ ধরনের চুক্তি বা সমঝোতা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি”, বলে সিপিবি।  

এমনিতেই দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র প্রভাব কোনো দেশেই স্থায়ী হচ্ছে না। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্র কে তাঁর গদিচ্যুত হওয়ার ঘটনায় ও তাঁর গ্রেফতারির ঘটনায় নাম না করে অভিযুক্ত করেছেন। নেপালে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির চীন-ঘেঁষা সরকারে যুক্তরাষ্ট্র কল্কে পায়না। চীনের সাথে সীমানা থাকা ভুটান ভারতের প্রভাবাধীন হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। শ্রীলংকার টালমাটাল অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র কোনো ভবিষ্যৎ দেখে না, আর সামরিক শাসনাধীন মায়ানমার সরকার তীব্র ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বিরোধী হওয়ায় সেখানেও ওয়াশিংটন ডিসি পোদ্দারি করতে পারে না। 

এমতাবস্থায় বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বাড়ার অনেক বেশি কারণ আছে। কারণ বিএনপি বা জেপির মতন দলগুলোকে যদি নির্বাচনে জিততে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করে তাহলে সেই দলগুলোর সরকার তৈরি হলে পশ্চিমা জোট বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ও সামরিক – দুই ভাবেই লাভবান হবে। এখন দেখার ব্যাপার হল যে সত্যিই কি বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কাজে দেবে নাকি পশ্চিমা ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বাংলাদেশের বিরোধীরা নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়োল মারবেন। 

লেখক

Leave a comment
scroll to top