দলিত বনাম ব্রাহ্মণ্যবাদ, এটাকে ‘সনাতন ধর্ম নিয়ে বিতর্ক’ বলে চালাচ্ছে গোদি বা উচ্চবর্ণীয় মিডিয়া। উনা, হাতরাস, কোঁরেগাও, রোহিত ভেমুলার মৃত্যুমিছিল দেখা ভারতে এটা রাজনৈতিক সংঘাত। দুটোতেই আছি, বা সামান্য আছি – এই রাজনীতি সামনের নির্বাচনে আর চলছে না।
কমণ্ডল-র বিরুদ্ধে মণ্ডল কথা বলবে। এটাই ভবিতব্য। উচ্চবর্ণের ভোট পেতে রামমন্দিরের দরজা খোলা রাজীব গান্ধীর কংগ্রেস এখন এ সত্য মানতে বাধ্য। ভারতের সংসদীয় বামপন্থীরা বিষয়টিকে কখনও অ্যাড্রেস করেনি। করলেও ওই বুড়ি ছোঁয়ার মত। তৃণমূলের মত পার্টিগুলো অ্যাডভান্টেজ পেলেও – নেতৃত্ব আসলেই ব্রাহ্মণ্যবাদী। ফলে রামমন্দিরের বিরুদ্ধে তাদের জগন্নাথ মন্দির নামাতে হয়। কালীঘাট-দক্ষিণেশ্বর জুড়তে হয়। রামনবমীর উল্টো হনুমানজয়ন্তী নামাতে হয়। সবটাই আরএসএসের ন্যারেটিভে।
উদয়নিধি স্ট্যালিন ম্যালেরিয়া ডেঙ্গুর সঙ্গে সনাতন ধর্মের তূলনা করলেন। ভারতের বহুজন, দলিত বিষয়টা কী ভাবে দেখছে? তারা কি আরএসএসের প্ররোচনায় চাঁদ দেখে গোরক্ষক হয়ে দাঙ্গায় নামবে, নাকি সারা ভারতের দলিত-সংখ্যালঘু নিধনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে? রাজনীতিটা সোজা। সমস্যা ইন্ডিয়া জোটের ব্রাহ্মণ্যবাদ প্র্যাকটিস করা নেতৃত্বের। জনতার জোট নাকি বিজেপির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ব্রাহ্মণ্যবাদী নেতাদের পরিচালিত দলগুলির জোট? সামনের কয়েক মাসের ভাঙাগড়া চলন বলে দেবে। আপাতত, – ভারতের বৃহত্তর ভোট ব্যাঙ্ক একজোট হওয়ার দিকে উদয়নিধি স্ট্যালিনের বক্তব্য ‘একখানি রামধাক্কা।’
সনাতন কী, খায় নাকি মাথায় দেয়, হিন্দুত্ব দিয়ে আর চন্দ্রবিজয় দিয়ে হচ্ছে না, আরো কিছু চাই, যা দিয়ে ইসলামোফোবিয়া আরো উচ্চগ্রামে বাঁধা যায়, – পথ খুঁজছে বিজেপি। ‘মোদি বনাম নো-মোদি’- রাজনীতির মূল সুর কোনটা, খুঁজতে ব্যাস্ত কংগ্রেস-তৃণমূলের মত দলগুলি দলিত-বহুজন রাজনীতিকে প্রকাশ্যে আনবে বলে মনে হয় না। আবার, উত্তর ভারতের রাজনীতিতে তা না করলে বিজেপি-মুক্ত ভারতের স্বপ্ন দেখাও বৃথা। অতএব, কংগ্রেস বা কংগ্রেস ঘরানার দলগুলিকে অতীতের অবস্হান ছাড়তে হবে। সোজা কথায়, -‘হিন্দুত্ব বা বকলমে সনাতনী’ পরিচয়সত্তাকে প্রশ্ন করতে হবে। আর বামপন্থীদেরও ভারতের ধর্মীয়-সামন্ততন্ত্র নিয়ে কথা বলতে হবে। নইলে বাংলার মত অন্যত্রও ‘ব্রাহ্মণ্যবাদী’ পরিচয়টিও থেকে যাবে।
আম্বেদকরের পথে, পেরিয়ারের পথে উদয়নিধি স্ট্যালিনের বক্তব্যের সমর্থনে আপাতত সমর্থন বারবে বৈ কমবে না। নানা রাজ্যের নানান ছোটবড় রাজনৈতিক দল, সংগঠন আসন্ন নির্বাচনের আগে ‘ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া-সনাতনী’ শব্দবন্ধে জোর পাবে। জাতপাত, অস্পৃশ্যতা মেনে নিয়ে স্রেফ ভোটব্যাঙ্ক ভরানোর স্বপ্ন সফল হতেও পারে, কিন্তু স্ট্যালিনের বক্তব্য ভারতের মূলনিবাসী বৃহত্তর পরিচিতির স্বর।
বিজেপির মিডিয়া এই সনাতনী-বিতর্কে সনাতনী পথই নিচ্ছে ও নেবে। রাজনৈতিক সংঘাতকে সংঘাত বলা ভাল। বিতর্ক নয়। সংঘাতহীন বিতর্ক দিয়ে আরএসএসের বিজেপিকে সরানো মুশকিল। অন্তত, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডির মত দলগুলি এই বাস্তবতা বুঝছে।