যেন লোহার বাসর ঘরে ফুটো করলেন বিশ্বকর্মা। মণিপুর হিংসার আঁচ পৌঁছালো বিজেপির ঘরেই। এন বীরেন সিংহের সরকারের থেকে সমর্থন তুলে নিল এনডিএ-র শরিক দল ‘কুকি পিপলস অ্যালায়েন্স’ (কেপিএ)। গত রবিবার রাজ্যপাল অনসূয়া উইকেকে চিঠি লিখে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানিয়েছেন কেপিএ-এর সভাপতি টংমাং হাওকিপ। এত দিন মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের ক্ষোভ সামলাতে হচ্ছিল মোদী সরকারকে। এ বার শরিক সরে দাঁড়ানোয় বিজেপি শিবিরের অস্বস্তি বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।
মণিপুরে বিজেপি সরকারের সঙ্গে জোটে শামিল হয়েছিল কেপিএ। তাঁদের দুই বিধায়কও রয়েছেন। রবিবার রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে এই দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পর মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের সরকারের প্রতি সমর্থন জারি রাখা ঠিক হবে না তাদের পক্ষে। তাই মণিপুর সরকারের থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা হচ্ছে কেপিএ-এর তরফে।
তবে কেপিএ-র দুই বিধায়কের সমর্থন প্রত্যাহারে মণিপুরের রাজ্য সরকার কি বিপদে পড়বে? এমনটা হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। মণিপুরে ৬০টি আসন সম্বলিত বিধানসভায় বিজেপির একার হাতেই রয়েছেন ৩২ জন বিধায়ক। পাশাপাশি, নাগা পিপলস ফ্রন্টের পাঁচ জন এবং তিন নির্দল বিধায়কের সমর্থনও রয়েছে বিজেপির হাতে। অন্য দিকে, বিরোধী শিবিরে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হাতে রয়েছে সাত বিধায়ক। পাঁচ বিধায়ক রয়েছে কংগ্রেসের। জেডিইউ-র হাতে রয়েছে ছয় বিধায়ক। তবে মণিপুরের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। একবার পদত্যাগ করার ইচ্ছাপ্রকাশও করেছিলেন তিনি। তবে পরে ‘জনগণ চাইছেনা’ এমন কারণ দেখিয়েই মত বদলান তিনি।
গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত মণিপুর। উত্তর পূর্বের এই রাজ্যে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নব গঠিত ইন্ডিয়া জোটের তরফ থেকেও গিয়েছিল প্রতিনিধি দল। কিন্তু তার পরও পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র বদল ঘটেনি। সেই সংঘর্ষের মধ্যেই সম্প্রতি দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানোর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। গত ৪ মে কঙ্গপোকপি জেলায় দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ করা হয় সেই দুই মহিলার মধ্যে একজনকে গণধর্ষণ করে হিন্দুত্ববাদী মেইতেই-দের সেই ভীড়।
২৬ সেকেন্ডের ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসার পরেই দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। মণিপুরের ঘটনার নিন্দায় সরব হয় নানা মহল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে পাঁচ প্রশাসনিক কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই দীর্ঘ নীরবতা ভাঙেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মণিপুর নিয়ে ৭৮ দিন মৌন থাকার পর মোদী বলেছিলেন, ‘‘এই ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের লজ্জা।’’ যদিও মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে সরব বিরোধীরা। এই নিয়ে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আগামী ৮ অগস্ট আলোচনা হবে সংসদে। ১০ অগস্ট জবাবি বক্তৃতা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, বাদল অধিবেশনের এই সাওয়াল জবাবের মধ্যেই পাশ হয়ে গিয়েছে দুইটি বিল। একটি বন অধিকার আইন অন্যটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ খনন আইন। বন অধিকার আইনে যে সংশোধন আনা হয়েছে সেটা অনুযায়ী গোটা মণিপুরের খণিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল আর বন আইনের আওতায় পড়ছে না। তাই এর প্রভাব চলমান পরিস্থিতিতে পড়তে পারে বলে মনে করছে তারা।এর মধ্যেই সে রাজ্যে শরিকের সমর্থন হারাল গেরুয়া শিবির। তাই রাজ্যের ক্ষেত্রে আপাত দৃষ্টিতে তেমন প্রভাব না পড়লেও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে এর প্রভাব স্বস্তি জনক নয় বলেই মনে করছে বিরোধীরা।