আফগানিস্তান যুদ্ধে, অস্ট্রেলীয় বাহিনী-র সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ-কে ঘিরে চলমান কেলেঙ্কারি গত কয়েক বছর ধরে কোনো সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান ছাড়াই, অস্ট্রেলীয় বাহিনী ও রাজনীতিকে জর্জরিত করেছে। অস্ট্রেলীয় বাহিনী-র ক্ষেত্রে এই বিব্রতকর বিষয়টি সম্প্রতি আবার মাথা চাড়া দিয়েছে, যখন অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সজ্জিত জীবন্ত যুদ্ধের ‘নায়ক’ বেন রবার্টস-স্মিথের তিনটি সংবাদপত্রের [যার প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছিল যে তিনি আফগান বেসামরিক হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন] বিরুদ্ধে আনা মানহানির মামলাটির রায় দেওয়া হয়েছে। সেই মামলার বিচারক রায় দিয়েছেন যে মিডিয়া রিপোর্টগুলি “যথেষ্ট সত্য” ছিল, কার্যত রবার্টস-স্মিথকে যুদ্ধাপরাধী এবং মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়েছে।
২০২০ সালের শেষের দিকে, প্রাক্তন মরিসন লিবারেল সরকার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ব্রেরেটন তদন্ত – দেখিয়েছে যে আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় এডিএফ(অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্স)-এর সৈন্যরা যুদ্ধাপরাধ করেছে বলে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আদালতে ফৌজদারি মামলা আনার লক্ষ্যে ব্রেরেটন আরও তদন্ত পরিচালনা করার সুপারিশ করেছিলেন। আপাতদৃষ্টিতে কখনও শেষ না হওয়া প্রক্রিয়াটি এখনও অব্যাহত রয়েছে। আজ অবধি এই বিষয়ে মাত্র একজন নিম্ন-পদস্থ সৈনিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
তবে ব্রেরেটন, আফগানিস্তানের যুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার সিনিয়র সামরিক কমান্ডারদের সম্পূর্ণভাবে অব্যাহতি দিয়েছেন – যার মধ্যে অস্ট্রেলীয় বাহিনী-র বর্তমান প্রধান, জেনারেল অ্যাঙ্গাস ক্যাম্পবেলও আছেন যিনি ২০১১ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে অস্ট্রেলিয়ার সৈন্যদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফেডারেল পার্লামেন্টে, স্বাধীন সেনেটর জ্যাকি ল্যাম্বি, একজন প্রাক্তন সৈনিক যিনি ১১ বছর এডিএফ-এ কাজ করেছিলেন, ঘোষণা করেছেন যে তিনি হেগ(Hague)শহরের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (ICC) যুদ্ধের জন্য আফগানিস্তানে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার সামরিক শীর্ষস্থানীয়দের দায়িত্বের বিষয়ে তদন্ত শুরু করতে বলেছেন। আইসিসি ১৯৯৮ সালে গুরুতরভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের তদন্ত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
সেনেটর ল্যাম্বি ব্রেরেটনকে এডিএফ-এর সিনিয়র কমান্ডারদের “ব্ল্যাঙ্কেট এক্সেম্পশন” দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং আরও অভিযোগ করেছেন যে “অস্ট্রেলিয়ার সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা উচ্চতর কমান্ডারদের বিষয়ে যথাযথ তদন্ত সক্রিয়ভাবে এবং পদ্ধতিগতভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।” “এডিএফের সর্বোচ্চ স্তরে কোনো বিষয়কে আড়াল করার একটি সংস্কৃতি রয়েছে” সেনেটর বলেছিলেন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের (যাকে তিনি “আল্টিমেট বয়েস ক্লাব” হিসাবে বর্ণনা করেছেন ) জুনিয়র অফিসারদের বেআইনী ভাবে বিপর্যস্ত করার অভিযোগ করেছেন তিনি। ল্যাম্বির দাবি অনুযায়ী এডিএফের কর্তৃপক্ষরা সমস্ত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার পরেও নীরব ভূমিকা পালন করেছে। ল্যাম্বি আইসিসির কাছে, একটি ২৮-পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত আইনি বিবরণ জমা দিয়েছেন, যা একজন সামরিক আইনজীবীর দ্বারা প্রস্তুত করা হয়েছে, আফগানিস্তানে অস্ট্রেলীয় বাহিনী দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য এডিএফ-এর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের দায় নিয়ে তদন্ত শুরু করতে সংস্থাটিকে একটি অফিসিয়াল অনুরোধ করেছেন।
তিনি বিশেষভাবে অসহায় জেনারেল ক্যাম্পবেলকে টার্গেট করে দাবি করেছিলেন যে চলমান তদন্ত প্রক্রিয়ায় তার জড়িত থাকার ফলে একটি “স্বার্থের দ্বন্দ্ব” তৈরি হয়েছিল এবং এটি “তার নিজের হোমওয়ার্ক চিহ্নিত করার” মধ্যে দিয়েই পরিচালিত হয়েছিল। “আমাদের সিনিয়র কমান্ডাররা নিঝঞ্ঝাটে খালাস হয়ে যান কিন্তু আমাদের জনগণকে যেন সোজা বাসের নীচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল… আর নয়, যথেষ্ট হয়েছে!” তিনি তার আবেগময় ভাষণে বলেছিলেন। অস্ট্রেলীয় বাহিনী-র শীর্ষস্থানীয় যোদ্ধাদের আড়াল করা ফেডারেল পার্লামেন্টের উভয় প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি দ্বিদলীয় লক্ষ্য, সেনেটর ল্যাম্বির এই অবস্থান ব্যবহারিক দিক থেকে কিছু অর্জন করবে কিনা তা নিয়ে তাই সন্দেহ থেকে যায়।
গ্রাহাম হাইস যিনি একজন প্রাক্তন মিডিয়া আইনজীবী এবং বর্তমান সাংবাদিক, RT-তে লিখেছেন, “তা সত্ত্বেও – ফলাফল যাই হোক না কেন – আবারও, আইকনোক্লাস্টিক এবং সাহসী সেনেটর ল্যাম্বি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন, যা সেই উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসারেরা যারা নিঃসন্দেহে আফগানিস্তানে অস্ট্রেলীয় বাহিনী দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য চূড়ান্ত দায় বহন করে, তাদের শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে পরপর অস্ট্রেলিয়ান সরকারের লজ্জাজনক এবং ঘৃণ্য ব্যর্থতাকে তুলে ধরেছে।”