Close

স্তালিন কে যেভাবে মারতে চেয়েছিল হিটলার: প্রতিগুপ্তচর সংস্থা SMERSH এর তথ্য সামনে আসলো

সম্প্রতি এক প্রাক্তন সোভিয়েত কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স অফিসার জানালেন কী ভাবে স্তালিন কে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হত্যা করতে চেয়েছিল হিটলার।

স্তালিন কে যেভাবে মারতে চেয়েছিল হিটলার: প্রতিগুপ্তচর সংস্থা SMERSH এর তথ্য সামনে আসলো

ইয়োসিফ স্তালিন কে হত্যার দায়িত্বপাপ্ত এক নাৎসি গুপ্তচর পরিবার অপরাধীদের শনাক্ত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল – সোভিয়েত সামরিক নিরাপত্তা পরিষেবা SMERSH-র এজেন্ট, এক বর্ষীয়ান কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স অফিসার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন।

SMERSH একটি যুদ্ধকালীন সোভিয়েত সংগঠন, যার নাম অনুবাদে দাঁড়ায় “গুপ্তচরদের মৃত্যু।” এই সংগঠন ১৯৪৩ সালে তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাওয়া যখন মিত্রশক্তির দিক থেকে আক্রমণকারী অক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে ঘুরে যায়, তখন ইউনিয়ন অফ সোভিয়েত সোশালিস্ট রিপালিকস (USSR) এর নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল শত্রুপক্ষের ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কিত টাটকা খবরের। আক্রমণের পরিকল্পনা সুষ্ঠভাবে করার জন্য এবং সম্ভাব্য নাশকতা রদ করার জন্য যা জরুরি।

১৯শে এপ্রিল SMERSH-র ৮০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ছিল। রসিয়স্কায়া গেজেটা এই অনুষ্ঠানের ছুতোয় কর্নেল জেনারেল আলেকজান্ডার বেজভারখনির সাথে কথা বলেছে। যিনি একজন প্রাক্তন সোভিয়েত কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কমান্ডার এবং গোপন অভিযানের ইতিহাসের এক উৎসাহী।

স্তালিন কে হত্যার ষড়যন্ত্র অপারেশন জেপেলিনের অন্তর্গত। অপারেশন জেপেলিন হল এক বিশেষ নাৎসি যুদ্ধ কৌশল, সোভিয়েত যুদ্ধ বন্দীদের নিয়োগ করে USSR-এর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা। হত্যার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক দম্পতি নিজেদের পিওত্র তাভরিন এবং লিডিয়া শিলোভা নামে পরিচয় দেন। তাঁরা যথাক্রমে, বাল্টিক অঞ্চলের একটি SMERSH বিভাগের ডেপুটি কমান্ডার এবং টাইপিস্ট হিসেবে নিজেদের জাহির করেন।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পরিষেবা NKVD এই দুজনকে আটক করেছিল। তাদের SMERSH কভার, যাকে বেজভারখনি “অনন্য” বলে অভিহিত করেছেন, তাঁকে হত্যা করা হয়। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল একটি গ্রেনেড লঞ্চার, একটি রেডিও নিয়ন্ত্রিত বোমা, কয়েক ডজন রাবার স্ট্যাম্প এবং অন্যান্য গুপ্তচরদের ব্যবহৃত জিনিষপত্র। এগুলো একটি গাড়িতে লুকিয়ে রাখা ছিল।

SMERSH ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই বিপত্তি আটকে দিতে পেরে বেশ কিছু সুবিধা অর্জন করেছিল। তারা চাপ দিয়ে ধৃতদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করে এবং তার ভিত্তিতে একটি “রেডিও গেম” চালু করে। এই শব্দবন্ধ প্রতিপক্ষের থেকেই ধার করা। এর লক্ষ্য তথ্যগত বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়া এবং আটক গুপ্তচরদের রেডিও ব্যবহার করে কার্য্যকর কৌশল নির্ধারণ করা।

তাভরিন এবং শিলোভাকে ব্যবহার করে এই খেলা চলে ১৯৪৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। SMERSH পরে আবিস্কার করে যে স্তালিনের কাছাকাছি পৌঁছনোর ক্ষেত্রে এজেন্টদের সম্ভাব্য অগ্রগতি সম্পর্কিত রিপোর্ট জার্মানরা সত্যি বলে ধরেছিল।

SMERSH এর নথি অনুযায়ী, যুদ্ধের সময় ৩০,০০০ জনেরও বেশি গুপ্তচর, ৩,৫০০ নাশকতাকারী এবং ৬,০০০ সন্ত্রাসবাদীকে ধরা হয়েছে। আর্কাইভ রেকর্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে বেজভারখনি বলেছেন, হাস্যকরভাবে, জালিয়াতিতে তাদের অনবদ্য দক্ষতার জন্য জার্মানি কিছু সাফল্য পায়। আরেকটি বিশেষ উদাহরণ হল জার্মান পেপারক্লিপ, যেগুলো স্টেনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি এবং সোভিয়েতের মত কাগজে মরচের চিহ্ন রেখে যায়নি।

SMERSH ১৯৪৬ সালে ভেঙে দেওয়া হয়। যুদ্ধের সমাপ্তির ফলে শত্রু পক্ষের ভেতর থেকে কূটনৈতিক কৌশল নির্ধারণে সহায়তার প্রয়োজন ফুরোয়।

Leave a comment
scroll to top