Close

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃষ্টিহীন ছাত্রদের মদ্যপের মার, প্রতিবাদে গেট অবরোধ

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেস্ট চলাকালীন কিছু দৃষ্টিহীন ছাত্রকে এক  মদ্যপ বাইকচালক ধাক্কা মারে, তার পর আরেক দফা তারা মার খান বলে অভিযোগ।

রবিবার, ৯ই এপ্রিল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেস্ট চলাকালীন সন্ধ্যে ৬.৩০ নাগাদ কিছু দৃষ্টিহীন ছাত্রকে এক মদ্যপ বাইকচালক ধাক্কা মারে, তার পর আরেক দফা তারা মার খান বলে অভিযোগ। এই  ঘটনার প্রেক্ষিতে এবং ক্যাম্পাসে প্রতিবন্ধী ছাত্রদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বেশ কয়েক দফা দাবি নিয়ে গতকাল, ১১ই এপ্রিল, ফোরাম ফর স্টুডেন্টস উইথ ডিসেবিলিটিস-এর পক্ষ থেকে সারাদিন ব্যাপি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীরা অবস্থান বিক্ষোভ করেন।

প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ইউনিয়ন FETSU আয়োজিত ফেস্টের শেষদিনে সূবর্ণ জয়ন্তী ভবনের সামনে অনিয়ন্ত্রিত ভিড়ের মাঝে অসিত মন্ডল, শুভজিৎ ভুঁইয়া সহ বেশ কয়েকজন সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন ছাত্রের সাথে এই দূর্ঘটনা ঘটে। এর আগের দিন, ৮ই এপ্রিল, একই ঘটনা ঘটে অসিত ও সূরজ ঝাঁ-র সাথে। সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ জানানোর পরেও শেষদিন ভিড় নিয়ন্ত্রনে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে ছাত্রদের পক্ষে অভিযোগ। এদিন দূর্ঘটনাগ্রস্থ ছাত্ররা হতচকিত হয়ে রাস্তার বাঁদিকে সরে যেতে গিয়ে একটি স্টলে হুমড়ি খেয়ে পড়েন এবং জনৈক দোকানদারের হাতে নিগৃহীত হন, যিনিও ঘটনার সময় মদ্যপ ছিলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অসিতের গলা টিপে ধরা হয় বলে ইস্ট পোস্ট বাংলাকে জানিয়েছেন তিনি।

সিমারুল বলছিলেন, “ধরো, কোথাও দুর্গাপূজা হচ্ছে, সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসছে, সেখানে পূজা কমিটির দায় আছে,  সরকারের যেমন দায় আছে, তেমন পূজা কমিটিকেও কিন্তু ভলেন্টিয়ার নামাতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে আমাদের ফেস্ট হয়, আমরাও ইউনিয়নের পার্ট, কিন্তু আমরা আনন্দ ভাগ করে নিতে পারি না। তার বদলে আমরা লোকের হাতে মার খাই।”

“যার ক্ষতি হয়েছে তার দিক থেকেও তো আমাদের ভাবতে হচ্ছে। ক্ষতিটা তো আমাদের দ্বারাই সাধিত হয়েছে কিন্তু আমরাতো আর ইচ্ছে করে ক্ষতি করিনি। আমরা বাধ্য। হয় ওনার জিনিসপত্রের ক্ষতি হত নয় আমার পায়ের ক্ষতি হত। এখন বস্তুর থেকে জীবনের মূল্য বেশি ভেবেই ওরা বাঁদিকে গেছে।”

গতকাল তাঁরা সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪.৩০ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ থেকে ৫ নম্বর গেটে অবস্থান করেন, এবং ক্যাম্পাসে যে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল প্রতিরোধ করেন। তাঁদের দুদফার দাবিতে আজ এই বিক্ষোভ, প্রথমত বেপরোয়া যান চলাচলে নিয়ন্ত্রন, তীব্রস্বরে লাউড স্পীকারে নিষেধাজ্ঞা, এবং দ্বিতীয়ত ক্যাম্পাসে সার্বিক ভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য সুবিধেজনক পরিকাঠামো গড়ে তোলা।

দৃষ্টিহীন ছাত্রদের ডেপুটেশন।

এঘটনার তিনদিন পরেও অভিযুক্তের  বিরুদ্ধে FIR দায়ের করা হয়নি। কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে, এবং ১৭ইএপ্রিলের মধ্যে রিপোর্ট প্রকাশের কথা বলেছে, যদিও আজ বিক্ষোভকারীদের চাপে ১৩ই এপ্রিলের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে। 

“এই ক্যাম্পাসে এমন একজনের হাতে মার খেলাম যে আমার ক্যাম্পাসের কেউ নয়। আমায় এমন একজন ধাক্কা মারছে যে বাইক চালানোর সময় সম্পুর্ণ ড্রাঙ্ক অবস্থায়। তার কোন হুঁশই নেই। সে আমাকে কেন আমার জায়গায় ডিভাইডার থাকলে সেটাকেও ধাক্কা মেরে উড়িয়ে দিত।” দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সূরজ বলছিলেন।

তাঁদের দাবির প্রেক্ষিতে আজ কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যানবাহনের প্রবেশ পথ হিসেবে ৩ নং গেট, প্রস্থানের জন্য ব্যবহার করবে ৪ নং গেট, পথচারিদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ফার্মাসিউটিকাল টেকনোলজি ভবন থেকে অরবিন্দ ভবন পর্যন্ত রাস্তার নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারণ করা হবে, এবং তার কাজ যতক্ষন না সম্পূর্ণ হচ্ছে ততদিন পার্কিং এর জন্য সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনের অংশ এবং টেকনোলজি ভবনের সংযুক্ত অংশ ব্যবহার করতে হবে। আবাসিক শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষার্থী এবং অশিক্ষক কর্মচারিরা যানচলাচলের জন্য ৫ নং গেট ব্যবহার করবে এবং ক্যাম্পাসের ভিতরে যান চলাচলের গতি ১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার মধ্যে থাকতে হবে।

কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তি।

“যে প্রতিক্রিয়া আপনারা আজ দেখলেন তা বহুদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। কারণ আমরা এটা দেখেছি যে ক্যাম্পাসে আমরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারি না।” সূরজ বলছিলেন, ক্যাম্পাসে এঘটনা নতুন নয়, বিশেষ করে লকডাউনের পরে ক্যাম্পাসে প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের প্রতি সৌহার্দ্যের বাতাবরণ চোখে পড়ার মত ব্যহত হয়েছে। “দেখতে পাস না?”  বলে গলা টিপে ধরছে। তারপরে দেখতে পেল যে দেখতে পায় না। অথচ দেখতে পায়না আগেই বুঝতে পেরেছে, কারণ হাতে লাঠি ছিল। এইটা হচ্ছে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের সাথে একই সঙ্গে হ্যারাসমেন্ট এবং ইনসাল্ট। আজকের প্রতিবন্ধী ছেলেটা ধাক্কা খেয়েছে তাই, নাহলে এই সমস্যা কিন্তু অপ্রতিবন্ধীরও। ইনক্লুসিভটাতো অনেক বড়ো ব্যাপার। এই মুভমেন্টটা হয়তো আরো ৫০ বছর লাগবে। এটা একটা আইডিয়া। সেটা শুধু অথরিটি বুঝলে হবে না। আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে।

Leave a comment
scroll to top