হামাসের আন্তর্জাতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহ ইরানের তেহরানে তার বাসভবনে হঠাৎ হামলায় নিহত হয়েছেন। হামাস এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে “ইসরায়েলের অভিযান”কে দায়ী করেছে।
হানিয়েহ ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ানের রাষ্ট্রপতি পদে অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সাথেও দেখা করেন । তার একদিন পরে ইরানের তেহরানে তার বাসভবনে হঠাৎ হামলায় নিহত হন ।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য প্রধান আলোচকদের একজন ইসমাইল হানিয়াহ । ইসমাইল হানিয়াহর সাথে তার দেহ রক্ষী ও সেই হামলায় নিহত হন । হামাস দাবি করেছে, এটি “ইসরায়েলি” অভিযানের ফলে হওয়া হত্যাকান্ড।
বলে রাখা ভালো,
- 1987 সালে হামাসে যোগ দেন ইসমাইল হানিয়াহ এবং 2017 সালে হামাসের শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হন ।
- এপ্রিলে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় তার ৩ ছেলে নিহত হয়
- 2006 সালে হামাসের আইনসভা নির্বাচনে জয়ের পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন
পরে 2007 সালে রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস তাকে পদ থেকে বরখাস্ত করেন ।
হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার বিষয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি
বলেন, “অপরাধী ও সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসক আমাদের বাড়িতে আমাদের প্রিয় অতিথিকে শহীদ করেছে এবং আমাদের শোকাহত করেছে, এটির জন্য তাঁদের কঠোর শাস্তির পেতে হবে “
তিনি আরও বলেন, “ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের ভূখণ্ডে ঘটে যাওয়া এই তিক্ত এবং কঠিন ঘটনার জন্য তার রক্তের প্রতিশোধ নেওয়াকে আমরা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি এটি আমাদের দায়িত্ব, এবং হানিয়াহের পরিবার এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রতি সমবেদনা জানাই।”
ইরানের নতুন রাষ্টরপতি মাসুদ পেজেশকিয়ান তার সোশ্যাল মিডিয়া এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন,”ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সম্মান, গৌরব এবং মর্যাদা রক্ষা করবে এবং সন্ত্রাসী হানাদারদের তাদের কাপুরুষোচিত কর্মকাণ্ডের জন্য অনুশোচনা করাবে,”
ইরান ইসমাইল হানিয়েহর মৃত্যুর জন্য দেশজুড়ে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে।
ইসরাইল হেরিটেজ মন্ত্রী আমিচাই ইলিয়াহু কার্যত তার উচ্ছাস ধরে রাখতে পারেননি তিনি বলেন “এই নোংরা পৃথিবীকে পরিষ্কার করার এটাই সঠিক উপায়। আর কোন কাল্পনিক শান্তি সমর্পণ চুক্তি নয়। আর কোনো করুণা নেই,হানিয়াহের মৃত্যু বিশ্বকে একটু ভালো করে তোলে “
আমিচাই ইলিয়াহু র মন্তব্যের পর বিশেষজ্ঞ মহল নিশ্চিত হয়ে পড়েছে যে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহর হত্যার পেছনে ইসরাইলের হাত রয়েছে ।
আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষজ্ঞরা ইসমাইল হানিয়াহুর হত্যাকান্ড নিয়ে কী বলেছেন ?
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ফোদ ইজাদি বলেছেন : “ইসরায়েলিদের এই ধরনের নিম্নমানের কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য মূল্য দিতে হবে… তারা গত নয় মাস ধরে প্রতিদিন কয়েক ডজন নারী ও শিশুকে হত্যা করছে… তারা আগের হামাস নেতা কে হত্যা করেছে যার কারণে ইসমাইল হানিয়াহ হামাস নেতা হয়েছিলেন।
ল্যারি জনসন, অবসরপ্রাপ্ত সিআইএ গোয়েন্দা বিশ্লেষক: “এই ক্রিয়াকলাপে স্পষ্টতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সমর্থন এবং এই ঘটনার খবর তাদের কাছে আগে থেকে ছিল… হানিয়েহের উপর এই আক্রমণ এতটাই নির্লজ্জ ছিল যে আমি মনে করি না যে আর কোনও অংশে সংযম থাকবে বলে । ইরান বা হিজবুল্লাহ সম্পর্কে আমি মনে করি যে এটি একটি লাল রেখা অতিক্রম করছে কারণ এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার বৈশিষ্ট্য রয়েছে।”
প্রফেসর মেইর লিটভাক, হামাসের একজন নেতৃস্থানীয় ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞ: “অবশ্যই একটি বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। ইরানের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি তাদের সার্বভৌমত্বের সংক্ষিপ্তকরণ ছিল… আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি যে সর্বোচ্চ নেতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ইরান প্রতিশোধ নেবে।”
ইউরি লিয়ামিন, সামরিক বিশেষজ্ঞ, (সিএএসটি) এর সিনিয়র গবেষক: “মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি যুদ্ধরত পক্ষগুলির মধ্যে উচ্চ মাত্রার উত্তেজনা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে; তাই এই ধরনের সাহসী এবং উত্তেজক পদক্ষেপ হানিয়েহ হত্যা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে এবং এখানে প্রধান বিপদ হল যে কোনও সময় পরিস্থিতি জড়িত সমস্ত পক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে”
এখন এটাই দেখার ইসমাইল হানিয়াহুর মৃত্যুতে ইরান কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে ।
আজ ইসরায়েলি সেনা বাহিনী দাবি করেছে। , ১৩ জুলাই দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের শীর্ষ সেনা কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এখনো তাৎক্ষণিকভাবে কোনো নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলি সেনা বাহিনী দাবি করেছে। “আমরা এখন নিশ্চিত করতে পারি: মোহাম্মদ দেইফকে বাদ দেওয়া হয়েছে,”
পরপর হামাসের দুজন বড়ো নেতৃত্বের মৃত্যু তে হামাস কি পিছু হটবে নাকি এর পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এটাই ভাবাচ্ছে বিশ্ব রাজনৈতীক মহলকে।