জীবন অনিশ্চিত। কেই বা জানতো ভাত জোগাতে বেরোনোর পর পুড়ে ছাই হয়ে যাবে সর্বস্ব। দমদম বাগজলা খাল সংলগ্ন মেলাবাগান বস্তিতে এমনটাই হল। ভরদুপুরে আগুন লেগে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে গেল ৫০টা ঘর। দিনের বেলায় কাজের কারণে সকলে বাইরে থাকায় মানুষের প্রাণহানি হয়নি বটে। তবে, সর্বশান্ত হয়েছেন তারা। আপাতত প্রশাসনের সাহায্যে বিধ্বস্ত বাসিন্দারা রয়েছেন বরাদ্দ রিলিফ সেন্টারে।
১৩ই মার্চ, শনিবার, সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ হঠাৎই আগুন লাগে ঝুপড়িতে। তারপর একেরপর এক বিষ্ফোরিত হয় গ্যাস সিলিন্ডার। নিমেষে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বস্তিতে। বস্তির পেছনে কুড়োনো ভাঙাচোরা প্লাস্টিকের স্তুপ থাকায় বিপত্তি বাড়ে। অগ্নিকান্ড এতটায় ভয়াবহ ছিল যে দেড় কিলোমিটার দূরে দমদম জংশন রেল স্টেশনের আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। তদন্তের পর প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে মূলত প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা পোড়ার ফলেই এই কালো ধোঁয়া তৈরি হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ যদিও এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তবে দমকলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে আগুন লাগার কারণ জানতে ফরেন্সিক তদন্ত চলছে। অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতার জেরে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দমদম রোডে আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল।
শনিবার আগুন লাগার পর প্রাথমিকভাবে খাল থেকে জল তুলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে সময়মতো দমকল পৌঁছয়। কিন্তু জায়গাটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় উদ্ধারকাজ শুরু করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। দমকলের তরফ থেকে উদ্ধারকল্পে প্রথমে পাঁচটি এবং তারপর আরও পাঁচটি ইঞ্জিন মোতায়েন করা হয়। এমনকি পাম্প বসিয়ে খালের জল তুলেও চলে আগুন নেভানোর প্রচেষ্টা। অবশেষে বিকেল পাঁচটা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে ফুটে ওঠে ধ্বংসের চিত্র। একের পর এক বেরোতে থাকে গবাদি পশুর ঝলসানো মৃত-অর্ধমৃত দেহ। সর্বস্ব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাসিন্দারা।
এইদিন রাতেও চলেছে উদ্বারকাজ। প্রশাসন সূত্রে খবর ইতিমধ্যেই অগ্ধিকান্ডে বাস্তুহারা বাসিন্দাদের সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে সুরের মাঠ সংলগ্ন রবীন্দ্র ভবনে। এখানে ২৬১ জন মানুষের থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। যদিও এরপর বাসিন্দাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান এখনও অজানা। অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত তদন্ত চলার কারণে ক্ষয়ক্ষতির চুড়ান্ত পরিমাণও এখনও জানানো সম্ভব হচ্ছে না প্রশাসনের তরফে।