ওড়িশা ভিত্তিক ডিস্টিলারি কোম্পানির বিরুদ্ধে আয়কর অভিযান আজ ষষ্ঠ দিনে পৌঁছিয়েছে। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, এযাবৎ পাঁচ দিনের গণনায় মোট ৩৫১ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কোনও তদন্ত সংস্থার দ্বারা এমন একশনে এই প্রথম এত টাকা উদ্ধার করা গেছে। এই মুহূর্তে আয়কর স্ক্যানারের আওতায় থাকা এই সম্পত্তি কংগ্রেস রাজ্যসভা সাংসদ ধীরাজ কুমার সাউ-এর সাথে জড়িত বলে জানা গিয়েছে। অতিরিক্ত মেশিন ও স্টাফ মোতায়েন করা কাজের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। নোট গণনা এখনও চলছে।
গত ৬ই ডিসেম্বর বৌধ ডিস্টিলারি প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া এবং ‘অফ-দ্য-বুক’ লেনদেনের অভিযোগে অনুসন্ধান করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত কংগ্রেস সাংসদ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। রবিবার ঊড়িষ্যা থেকে এসবিআই আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ভগত বেহেরা এই অভিযান প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “আমরা ১৭৬ টি ব্যাগ পেয়েছি এবং তার মধ্যে ১৪০টি গণনা করা হয়েছে, বাকিগুলি আজ গণনা করা হবে। ৩টি ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা গণনা প্রক্রিয়ায় জড়িত, আমাদের ৫০ জন আধিকারিক জড়িত৷ প্রায় ৪০টি (মুদ্রা গণনা) মেশিন এখানে আনা হয়েছিল, ২৫টি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ১৫টি ব্যাকআপ হিসাবে রাখা হয়েছে৷”
এই প্রসঙ্গে এএনআই- এর সাথে কথা বলতে গিয়ে অমিত শাহ বলেছেন, “আমি খুব অবাক হয়েছি; স্বাধীনতার পর একজন সাংসদের বাড়ি থেকে এত বড় অঙ্কের নগদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে কিন্তু এই দুর্নীতি নিয়ে গোটা INDIA জোট নীরব। আমি বুঝতে পারছি কংগ্রেস নীরব কারণ দুর্নীতি তাদের প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে কিন্তু জেডিইউ, আরজেডি, ডিএমকে, এবং এসপি সবাই চুপচাপ বসে আছে…এখন বুঝতে পারছি কেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হয়েছিল যে এজেন্সিগুলির অপব্যবহার করা হচ্ছে। এটা চালানো হয়েছিল কারণ তাদের মনে একটা ভয় ছিল। যাতে তাদের দুর্নীতির সব রহস্য উন্মোচিত হয়।”
অন্যদিকে বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স (পূর্বতন ট্যুইটার)-এ বলেছেন, “ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কোনওভাবেই এমপি ধীরাজ সাহুর ব্যবসার সাথে যুক্ত নয়। এটি শুধুমাত্র তিনিই ব্যাখ্যা করতে পারেন, এবং ব্যাখ্যা করা উচিত, কীভাবে বিপুল পরিমাণ নগদ আয়কর কর্তৃপক্ষ তার সম্পত্তি থেকে বের করেছে।”
এই নিয়ে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি শুক্রবার এক্স-এ পোস্ট করেছেন “দেশবাসীর উচিত এই নোটগুলির স্তূপের দিকে নজর দেওয়া এবং তারপরে তাদের নেতাদের সৎ ‘বক্তৃতা’ শোনা… জনগণের কাছ থেকে যা কিছু লুট করা হয়েছে, প্রতিটি পয়সা ফেরত দিতে হবে, এই মোদির গ্যারান্টি।” শনিবার ঝাড়খণ্ডের বিজেপি ইউনিট দাবি করেছে যে, এই ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা যা ওড়িশায় অভিযানের সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল কংগ্রেস নেতা সাহুর “ঘোড়ার ব্যবসা এবং রিসর্ট রাজনীতি”-র জন্য বরাদ্দ ছিল।
ওড়িশা আয়কর অভিযানের বিষয়ে এখনও যা যা জানা গিয়েছে
আয়কর বিভাগ মুদ্রা নোট গণনা করার জন্য প্রায় ৪০টি বড় এবং ছোট মেশিন মোতায়েন করেছে এবং প্রক্রিয়াটি শেষ করতে আরও বিভাগ এবং ব্যাঙ্ক কর্মীদের নিয়ে এসেছে, যা ৬ই ডিসেম্বর থেকে বৌধ ডিস্টিলারি প্রাইভেট লিমিটেড এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অভিযানের পর শুরু হয়েছিল, সূত্র জানিয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছে যে পশ্চিম ওড়িশার অন্যতম বৃহত্তম দেশীয় মদ প্রস্তুতকারক বলদেও সাহু এবং গ্রুপ অফ কোম্পানির সাথে জড়িত অংশীদারদের উৎপাদন ইউনিট এবং প্রাঙ্গনে অভিযান চালানোর পরে, সংস্থাটি এখন এই গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত সমস্ত ব্যক্তির অফিস এবং বাসস্থান লক্ষ্য করছে। শুক্রবার আয়কর বিভাগ তদন্তের ফলে ১৫৬টি নগদ ভর্তি ব্যাগ বাজেয়াপ্ত করেছে এবং গণনার জন্য বোলানগীর-এ এসবিআই-এর প্রধান শাখায় নিয়ে গেছে। এছাড়াও আয়কর বিভাগের তরফ থেকে সম্বলপুর, রাউরকেলা, বোলাঙ্গির, সুন্দরগড় এবং ভুবনেশ্বরে অভিযান চালানো হয়।