নাৎসিবাদ বনাম জায়নবাদ নাকি একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ (পর্ব ২)
এই এক সপ্তাহের মধ্যে বেশ কতগুলো ঘটনা ঘটে গেল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি সবাই জানে। কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। গত শুক্রবার এই যুদ্ধবিরতি জারি হয়েছে, ৫০ জন হামাসের বন্দীর বিনিময়ে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময়ের মাধমে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হবে বলে খাতায় কলমে জানানো হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যেন বার বার এটাই মনে করিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর যে যুদ্ধ এখন শেষ হয়নি। এর আগে নেতানিয়াহু বলেছিলেন হামাসের সাথে কোনোরকম যুদ্ধবিরতির কথা বলা পরাজয়ের সমান। তাহলে তিনি কি পরাজয়টা স্বীকার করলেন? গত বৃহস্পতিবার সিএনবিসি একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে যে, ইসারায়েল ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী সঙ্ঘাতে ফিলিস্তিনের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস হতে চলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, গত মাসে, আনুমানিক ১৪২,০০০ জন গাজাবাসী তাদের চাকরি হারিয়েছে, যা তার মোট কর্মশক্তির ৬১ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। ছিটমহলের বেকারত্বের হার বিশ্বের সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশেরও বেশি। এটি প্রায় সমগ্র গাজার জনসংখ্যাকে কর্মহীন করে রেখেছে।“
এর আগেই শ্রম জায়নবাদ নিয়ে আলচনা প্রসঙ্গে বলেছি যে ফিলিস্তিনে আরব শ্রমিকদের, ইহুদি শ্রমিক দ্বারা প্রতিস্থাপন করা ছিল এই মতাদর্শের অন্যতম কর্মসূচি। কিন্তু কেন? আচ্ছা এভাবেও কি বিনয়টাখে দেখা যেতে পারে যে, আরব বলয়ে পশ্চিমা মদতপুষ্ট শেখ দুর্বৃত্তপুঁজির সঙ্গে ইসরায়েলের সাহায্যে বিশুদ্ধ লগ্নিপুঁজির দ্বন্দ্ব? এমনিতেই প্রতিবন্ধী লগ্নিপুঁজিকে দুর্বৃত্তপুঁজির অবলম্বন ব্যবহার করতে গেলে একটু বেশিই মূল্য দিতে হয়। কারণ ফর্ম যাই হোক না কেন কন্টেন্ট হিসেবে পুঁজির লক্ষ্য সর্বদাই সর্বোচ্চ মুনাফা। কে যেন বেশ বলেছিল না, ৩০০ শতাংশ মুনাফা নিশ্চিত দেখলে পুঁজি এমনকি তাঁর পুঁজিপতিকেও খতম করতে কসুর করে না। কিন্তু সব ইহুদিই কি জায়নবাদী? চলমান সঙ্ঘাত প্রসঙ্গে জায়নবাদ বিরোধী একটি ঝড় উঠেছে। কিন্তু একটা বিরুপ চিন্তাও ছড়িয়ে পড়েছে এই মর্মে যে “হিটলার যা করেছিল ঠিক করেছিল”। যাইহোক, কারও অকম্মের দিকে নির্দেশ করে অন্য কারও দুষ্কর্মকে ছাড়পত্র দেওয়া যায়না, তা যেমন জায়নবাদের ক্ষেত্রে সত্যি তেমনই নাৎসিবাদের ক্ষেত্রেও সত্যি। এর আগের পর্বে এও জানিয়েছি যে শুধুমাত্র অ্যান্টি সেমেটিসম বা ইহুদিবিদ্বেষই জায়নবাদের জন্মের কারণ নয়। তাহলে কেন এর উত্থান? আসুন আলচনা করা যাক।
জায়নবাদ যদি সন্তান হয় তবে প্রসূতি কে?
উনিশ শতকের শুরুর দিকে ফিলিস্তিনের ভুখন্ড থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে মধ্য এবং পুর্ব ইউরোপে হাস্কালাহ-এর ফল স্বরূপ জন্ম নিল জায়নবাদ। এই হাস্কালাহ ইতিহাসে ইহুদী নবজাগরণ নামে পরিচিত। হাস্কালাহ ছিল মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের ইহুদিদের মধ্যে একটি ইন্টেলেকচুয়াল আন্দোলন, যার একটি নির্দিষ্ট প্রভাব পশ্চিম ইউরোপ এবং মুসলিম বিশ্বের উপর ছিল। এটি ১৭৭০-এর দশকে একটি হঠাৎ গজিয়ে ওঠা দর্শন হিসাবে সঙ্ক্রামিত হয়েছিল এবং এর শেষ পর্যায়টি ইহুদি জাতীয়তাবাদের উত্থানের সাথে ১৮৮১ সালের দিকে ঘনবদ্ধ হয়েছিল।
হাস্কালাহ দুটি যমজ লক্ষ্য নিয়ে চলছিল। এই তথাকথিত নবজাগরণ ইহুদিদেরকে একটি পৃথক, অনন্য জাতি-গোষ্ঠী হিসাবে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেছিল এবং এটি ধর্মনিরপেক্ষ জীবনযাত্রার উদ্দ্যেশ্যে অথচ হিব্রু পুনরুজ্জীবন সহ সাংস্কৃতিক ও নৈতিক নবীকরণের একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোয়, যার ফলেই মুদ্রণে হিব্রু ভাষার আবির্ভাব হয়। আশ্চর্য নয় কি? এরই সাথে আশপাশের সমাজে একটি মারাত্মক সম্প্রসারণের উদ্দ্যেশ্যে অন্যান্য সংস্কৃতি, শৈলী সহ স্থানীয় ভাষার অধ্যয়ন এমনকি তথাকথিত আধুনিক মূল্যবোধ গ্ৰহণের প্রচার পর্যন্ত করেছিল! হাস্কালাহ ছিল প্রধানত স্বায়ত্তশাসিত সম্প্রদায়ের ক্ষয়িষ্ণু ঐতিহ্যবাহী ইহুদি সমাজ এবং সাংস্কৃতিক নির্জনতা রূপান্তরের একটি আন্দোলন এবং আধুনিক ইহুদি রাষ্ট্রবাদের সূচনার ইতিবৃত্ত ছিল এই। তাই খুব সঙ্গতভাবেই ফেইনার যেমন উল্লেখ করেছেন, “হাস্কালাহ-এর সাথে যুক্ত সবকিছুই ছিল দ্বিচারী প্রকৃতির।”
সুতরাং তথাকথিত ইহুদি নবজাগরনের কান্ডারীরা দুটি দ্বিচারী কর্মসূচি অনুসরণ করেছিল। তারা ইহুদিদেরকে আধুনিক রাষ্ট্রের সাথে পুরোনো ইহুদী অস্মিতা মিলিয়ে মিশিয়ে নেওয়ার এক বিভ্রান্তিকর সমাজ মনস্তত্ত্বের জন্ম দিয়েছিল। তাই তারা দাবি করেছিল যে ইহুদিরা এরপরেও তাদের নিজস্ব হিব্রু অস্মিতা নিয়েই নাকি একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী হিসাবে আধুনিক রাষ্ট্রবাদের জামা গায়ে দিয়ে বহাল থাকবে। হাস্কালাহ-এর মাধ্যমে জায়নবাদী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও এর উপযোগী করেই তৈরি হয়েছিল। এটি ইহুদী হিসেবে অতীতের সমাজবিচ্ছিন্ন সম্প্রদায়ের বিরোধিতা করেছিল কিন্তু একটি শক্তিশালী ইহুদি সম্প্রসারণবাদের লক্ষ্যমাত্রায়নিয়ে সংগঠিত হয়েছিল। সুতরাং এই কাঠামো মূলতঃ শাসকের স্বার্থেই সাধারণ জনগণের সমাজ মনস্তত্ত্ব বিনির্মানে প্রায় সাফল্যের আজকের জায়নবাদে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। উদাহরনস্বরূপ বলা যায় যে ইসরায়েলের অধিকাংশ সাধারণ জনগণ আজকের প্রাতিষ্ঠানিক জায়নবাদের প্রশ্নাতীত আনুগত্যের শিকার হয়ে পড়েছে। শুরুটা দেখে একজন দূরদ্রষ্টা অনেক আগেই এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তার টুওয়ার্ডস দ্য হিস্টরিকাল ডেফিনিশন অফ হাস্কালাহ বইতে।
মধ্যযুগে ইহুদীদের শ্রেণীবিন্যাস এবং অ্যান্টি-সেমেটিসমের সূত্রপাত
তাদের কল্পনায় এই চিত্র কেন ফুটে উঠেছিল তার জন্য তৎকালীন সময়ে তাদের শ্রেণী অবস্থান সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারনা থাকা খুব জরুরী। গত পর্বে মোজেস হেসের কথা উল্লেখ করেছিলাম। শ্রম জায়নবাদের অন্যতম প্রবক্তা মোজেস হেস ১৮৬২ সালে তার রোম এবং জেরুজালেম: দ্য লাস্ট ন্যাশনাল কোয়েশ্চেন লেখায় জাতীয়তার প্রশ্ন নিষ্পত্তির উপায় হিসাবে ইহুদিদের প্যালেস্টাইনে বসতি স্থাপনের জন্য যুক্তি দিয়েছিল। তিনি ইহুদীদের এক অনুৎপাদনশীল বণিক শ্রেণী হিসেবে দেখতেন, যেই কারণেই তিনি একটি সুগঠিত ইহুদী জাতি গঠনের জন্য ইহুদীদের শ্রমের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই মোজেস হেসের ধারণা পুরোপুরি নির্ভুল ছিলনা। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গিতে যা অ্যান্টি সেমেটিসম নামে ঊঠে এসেছে তার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট অন্য কথা বলছে। অ্যান্টি সেমেটিসমের সবচেয়ে পুরনো যে ঘটনার ঐতিহাসিক দলিল পাওয়া যায় তা হল রাইনল্যান্ড ম্যাসাকার বা ১০৯৬ সালের জার্মান ক্রুসেড। ১০৯৬ সালের এই দাঙ্গার আগে ক্যাথলিকদের এই প্রচারকে কারন হিসাবে ধরা যে, ইহুদীরা যীশুর হত্যার মূল কারিগর ছিল। যদিও এই ঘটনায় একটা গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিক হল, এই সময় রাইনল্যান্ডের ইহুদীরা মুলত কৃষকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। কিন্তু কেন?
ক্যাথলিকদের জন্য সুদের কারবার ইত্যাদি ছিল নিষিদ্ধ। সেই সময় ইহুদীরাই মূলত ইউরোপে মহাজনী এবং সুদের কারবার করত। স্বভাবতই তারা তখন বণিক শ্রেণী হিসেবে বেশ পোক্ত, তাই সামন্ততন্ত্রের সাথে তাদের সংঘাত থাকাও অমূলক নয়। একই সাথে শ্রেণীগত ভাবে একদম নিচের স্তরে থাকা কৃষকদের/ ভুমিদাসদের সাথেও তাদের সম্পর্ক মধুর ছিল না। ইতিহাসের যে সময়কালে পুঁজিবাদ প্রসূতির পেটে ক্রমাগত লাথি মারছে ঠিক তখন, বাকি জায়গার মতই এটাও আসলে সম্পদ এবং এলাকা দখলের লড়াই, ও সর্বোপরি ব্যবস্থা বদলের লড়াইয়ের অংশ; যেমন বাইজান্টাইনে তেমনই রাইনল্যান্ডেও। ধর্মযুদ্ধের প্রসঙ্গ একটা আড়াল মাত্র। রাইনল্যান্ডেও কৃষকদের সাথে ইহুদীদের অর্থনৈতিক দ্বন্দকে ব্যাবহার করেছিল ক্যাথলিকেরা। মাথায় রাখতে হবে তখনও কিন্তু ইহুদীরা স্রেফ একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী, জাতি নয়। এই অর্থনৈতিক লড়াই অবশেষে অ্যান্টি সেমেটিসমের নামে ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কালে কালে, এবং ইহুদীদের ঘেটুকরণ শুরু হয়। সেটাও প্রায় এর পাঁচ শতক পরের ঘটনা। পঞ্চদশ শতকের পর থেকে রোমে প্রথম ইহুদী ঘেটুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার এর পরেও সমাজ তথা প্রশাসনের উচ্চতর স্থানগুলো দখল করতে ইহুদীদের তেমন বেগ পেতে হয়নি, কারন শ্রেণীগতভাবে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্বল ছিল না একেবারেই।
উনিশ দশকে জার্মানি ও জায়নবাদ
পরবর্তী সময়ে হিটলার এই অ্যান্টি সেমেটিসমকে স্রেফ অজুহাত হিসেবে ব্যাবহার করেছেন। ততদিনে জায়নবাদ-এর জন্ম হয়ে গিয়েছে। নবজাগরণের জ্ঞানের উদ্দ্যেশ্য খারিজ হয়ে গিয়ে জাতীয়তাবাদ দিয়ে দুনিয়া দখলের উদ্দ্যেশ্য চাগাড় দিয়ে উঠেছে। ফ্যাসীবাদের চিরাচারিত নিয়ম অনুযায়ী যেহেতু সমাজে একটি ছদ্ম কু-জাতির জন্ম দিতে হয়, তাই হিটলার জার্মান সমাজে জাতিগত প্রতিপক্ষ হিসেবে ইহুদীদেরই বেছে নিয়েছিল। যদিও তখনও অধিকাংশ ইহুদীই জায়নবাদ-এর সমর্থক ছিলনা, যেমনটা এখনও। ক্লাউস পোল্কেন তাঁর বই সিক্রেট কন্ট্যাক্টস: জায়নিজম অ্যান্ড নাৎসি জার্মানি বইতে তিনি লিখেছেন, “পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে ৫০৩,০০০ জন ইহুদি বাস করত, যা মোট জনসংখ্যার ০.৭৬ শতাংশ ছিল।… এই জার্মান ইহুদিরা ছিল নিশ্চিতভাবে হয় জায়নবাদী নন অথবা জায়নবাদ বিরোধী, এবং ১৯৩৭ সালের আগে, জায়োনিস্ট ইউনিয়ন ফর গেরনানি (জায়োনিস্টস ভেরিনিগুং ফুর ডয়েচল্যান্ড (এখন থেকে জেডভিএফডি) শুনানি পেতে খুব অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল। সেই বছর ইহুদীদের গণনা অনুযায়ী ১৯২৫ সালে, উদাহরণস্বরূপ, শুধুমাত্র ৮৭৩৯ জন ব্যক্তি (যা এমনকি ২ শতাংশও নয়) জায়োনিস্ট কনভেনশনগুলিতে (অর্থাৎ ইহুদিবাদী সংগঠনের সদস্য হিসাবে) ভোট দেওয়ার যোগ্য ছিল।“ তিনি আরও বলেছেন, “এইভাবে হিটলারের ক্ষমতা দখলের সময় জায়নবাদীরা ছিল একটি মৌলিকভাবে শ্রান্ত এবং তুচ্ছ সংখ্যালঘু যাদের সমাজে সামান্য প্রভাব ছিল এবং মূলত অ-জায়নবাদী সংগঠন যারা ইহুদিদের মধ্যে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছিল।
আর একটি আশ্চর্যজনক তথ্য উঠে আসে ক্লাউস পোল্কেনের লেখা থেকেই। ওই একই বইতে লেখক ইসরায়েলের কম্যুনিস্ট পার্টির একটি দলিল উদ্ধৃত করেছেন যেখানে বলা হয়েছে, “জার্মানিতে হিটলারের ক্ষমতা গ্রহণের পর, যখন বিশ্বের সমস্ত ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তি এবং ইহুদি সংগঠনের বড় অংশ নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বয়কট ঘোষণা করেছিল, তখন জায়নবাদী নেতাদের এবং হিটলারের গভর্নমেন্টের মধ্যে যোগাযোগ এবং সহযোগিতা বিদ্যমান ছিল।“ দলিলটির নাম, “ইনফরমেশন বুলেটিন, কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইসরায়েল, ৩-৪, ১৯৬৯, প-১৯৬”। এই দলিলে আরও নির্দিষ্ট করে লেখা আছে যে, “যে জায়নবাদী নেতৃত্বের জন্য ইহুদিদের উদ্ধার করা মূল লক্ষ্য ছিল না, অন্য উদ্দ্যেশ্যে একটি উপায় ছিল মাত্র (অর্থাৎ, ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা)”।
ক্লাউস লিখেছেন, “জার্মান ফ্যাসিবাদের প্রতি জায়নবাদী আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা, জায়নবাদী নেতাদের দৃষ্টিতে একটি নিষিদ্ধ ঘটনা। এই সময়কালে বারো বছরের শাসনে লক্ষ লক্ষ ইহুদি হত্যা করা হয়েছিল। তাই এই ঘটনাগুলি সম্পর্কে খাঁটি প্রমাণ বা নথি পাওয়া খুব কমই সম্ভব।“ ক্লাউস আরও লিখেছেন, “জার্মানিতে ফ্যাসিবাদী আধিপত্যের আগ্রাসনের প্রতি ইহুদিবাদীদের মনোভাব সর্ন কর্নন মতাদর্শগত অনুমান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল: ফ্যাসিস্ট এবং সেইসাথে জায়নবাদীরা অবৈজ্ঞানিক জাতিগত তত্ত্বগুলিতে বিশ্বাস করত এবং উভয়েই একই স্থলে মিলিত হয়েছিল যেমন রহস্যময় সাধারণীকরণে তাদের বিশ্বাসে। “জাতীয় চরিত্র (ভোল্কস্টাম) এবং “জাতি”, উভয়ই ছিল উচ্ছৃঙ্খল এবং “জাতিগত একচেটিয়াকরণের দিকে ঝুঁকছিল।“
কথায় বলে কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। ১৯৩৩ সালে হিটলার যখন যাবতীয় সরকারি ও আমলাতান্ত্রিক পদ থেকে ইহুদীদের সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করার পর ইহুদীরা দুর্ভোগের কালো মেঘ দেখেছিল, কিন্তু এই নিয়ে একমাত্র হাসি ফুটেছিল জায়নবাদীদের মুখেই। একজন ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ক্রিস্টফার সাইক্স-কে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “বৃটিশ ইতিহাসবিদ ক্রিস্টোফার সাইকস, অবশ্যই জায়নবাদী বিরোধী নন, তার মতামত দিয়েছেন যে “জায়নবাদী নেতারা নাৎসি বিপর্যয়ের একেবারে ট্র্যাজেডি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা পেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।“”
চলবে…